• March 22, 2023

শায়েস্তা খানের আমলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ দাও।

উত্তর : ভূমিকা : শায়েস্তা খানের শাসনামল বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন কৃতিত্বপূর্ণ কার্যাবলির জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। শায়েস্তা খানের সুবাদারি বাংলার ইতিহাসে একটি স্মরণীর যুগ। সমসাময়িক ইতিহাস লেখকরা তার গুণের ও কৃতিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শায়েস্তা খানের শাসনামলে
বাংলা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সস্তা ছিল। বাংলার ইতিহাসের শায়েস্তা খান অমর হয়ে আছেন। শায়েস্তা খানের আমলে বাংলা অর্থনৈতিক অবস্থা : শায়েস্তা খানের শাসনামল বাংলার ইতিহাসে একটি স্মরণীয় যুগ। নিম্নে শায়েস্তা খানের আমলে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা বিবরণ দেওয়া হলো :
১. কৃষিনির্ভর অর্থনীতি : শায়েস্তা খানের আমলে বাংলার অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। তিনি কৃষির উন্নতির জন্য কৃষকদের
দ্বৈত
কর আরোপ করা থেকে রক্ষা করেন। তিনি সেচ ব্যবস্থায় পরিবর্তন বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় উদ্ভাবন করে না। কৃষিজাত পণ্য
সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে সহায়তা করেন।
২. কৃষিজাত দ্রব্যের আমদানি-রপ্তানি : শায়েস্তা খানের সময় কৃষিজাত দ্রব্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হতো। ইউরোপীয় বণিক
দ্বারা কৃষিজাত দ্রব্য আমদানি করা হতো। এদেশ থেকে ধান, চিনি, গুড়, সুপারি, তেল, পাট ইত্যাদি বাইরে রপ্তানি করা হতো।
৩. ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার : ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে শায়েস্তা খানের অবদান অনেক। তিনি আমদানি-রপ্তানিতে ইউরোপীয় বণিকদের উৎসাহ দিতেন। শায়েস্তা খানের আমলে
পণ্যসামগ্রীতে ভরপুর ছিল। বাংলা তাই ইউরোপীয় বণিকদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে উৎসাহ দিতেন।
৪. খাদ্যশস্যের প্রাচুর্য : শায়েস্তা খানের আমলে বাংলা খাদ্যশস্যে ভরপুর ছিল এসময় ১ টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত। এই ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে তিনি ঢাকায় পঞ্চম গেট নির্মাণ করেন ফটকে লেখা হয় ভবিষ্যতে যে সুবেদার আমলে ১ টাকায় আট মন চাল পাওয়া যাবে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ যেন এই
তোরণদ্বার না খোলেন। নবাব সুজাউদ্দিন এই গেট খুলেছিলেন ।
৫. শিল্প ও শিল্পজাত দ্রব্য : শায়েস্তা খানের সময় বাংলার শিল্পের প্রসার ঘটে বাংলার কুটির শিল্প ও বস্ত্র শিল্পের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয় বাংলায় সুতি ও রেশম বস্তু ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো।
৬. আনকুরা রীতি রহিত : আনকুরা ছিল একটি ঘৃণিত ও জঘন্য রীতি কোনো ব্যক্তি মারা গেলে যদি তার পুত্র সন্তান না থাকে তাহলে ঐ মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, কন্যাসহ সমস্ত সম্পত্তি ঐ স্থানের জমিদার জোরপূর্বক দখল করতেন। শায়েস্তা খান এই রীতি বন্ধ করেন।
৭. ইউরোপীয় বণিকদের নিকট থেকে কর আদায় : শায়েস্তা খান ইউরোপীয় বণিকদের কাছে থেকে কর আদায় করেন। ইউরোপীয় বণিকরা এদেশে একচেটিয়া ব্যবসা করত। তাই তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জন্য বণিকদের নিকট থেকে অনেক অর্থ আদায় করত।
৮. সম্রাটকে কর ও উপহার প্রদান : শায়েস্তা খানের সময় রাজ্যব্যবস্থায় যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। শায়েস্তা খান সুবাদার নিযুক্ত হয়ে বার্ষিক কর প্রদান ছাড়াও সম্রাটকে ৭ লক্ষ টাকা ধার দেন
এবং ব্যক্তিগতভাবে নগদ ৩০ লাখ টাকা ও ৪ লাখ টাকার মণিমুক্তা উপহার দেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, শায়েস্তা খানের শাসনামল ছিল বাংলার ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগ। বাংলার কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়। পণ্যদ্রব্যের মূল্য এত সস্তা ছিল
যে ১ টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত। বাংলায় জলদস্যু ও মগ আক্রমণকারীদের প্রতিরোধে শায়েস্তা খানের অবদান অপরিসীম । বাংলার ব্যবসা বাণিজ্যক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!