লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব আলোচনা কর।

অথবা, লাহোর প্রস্তাবের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। একই সাথে এর ফলাফলও সুদূরপ্রসারী। ১৯৪০ সালে এ প্রস্তাব পেশ করার পর, মুসলমানদের সকল সমস্যার একটি নির্দিষ্ট সুরাহা মিলে । পরবর্তী সকল আন্দোলনের দিকপাল হিসেবে কাজ করে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব।
পটভূমি : ভারতে ঊনবিংশ শতক থেকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, হিন্দু জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের ফলে বার বার মুসলমানদের স্বার্থে আঘাত আসতে থাকে। ফলে মুসলমানরা তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবিদাওয়া পেশ করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য জয়লাভ করার পরও মুসলমানদের ছাড়া কংগ্রেস একক মন্ত্রিসভা গঠন করলে মুসলমানরা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৩৯ সালে তার দ্বিজাতি তত্ত্ব প্রকাশ করে। এরই আলোকে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়।
লাহোর প্রস্তাব: ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগের এক অধিবেশনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন এবং ২৪ মার্চ তা গৃহীত হয়। এতে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবি করা হয়।
গুরুত্ব : লাহোর প্রস্তাব ভারতের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এর গুরুত্ব নিচে দেওয়া হলো :
১. মুসলমানদের সকল সমস্যার সুরাহা : এর আগে মুসলমানরা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কংগ্রেস ও ব্রিটিশ সরকারের সাথে বিভিন্ন সমঝোতা ও চুক্তি করে কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে মুসলমানদের সকল সমস্যার সমাধানের একটি নির্দিষ্ট পথ প্রতিষ্ঠিত হয়।
২. সর্বাপেক্ষা গঠনমূলক প্রস্তাব : ভারতের মুসলমানদের সমস্যা সমাধানের জন্য মুসলিম লীগ দ্বারা গৃহীত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রথম গঠনমূলক প্রস্তাব। যা সকল মুসলমানদের কাছে সমানভাবে সমর্থন লাভ করে।
৩. পাকিস্তানের সৃষ্টি : এ প্রস্তাবে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির দাবি জানানো হয় যা পরবর্তীতে পাকিস্তান সৃষ্টির মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
৪. পূর্ব বাংলার বিভিন্ন আন্দোলনের কারণ : মূল লাহোর প্রস্তাবে প্রদেশগুলোর স্বায়ত্তশাসনের কথা বলা হয়েছে। এ কারণে পাকিস্তান সৃষ্টির পরও পূর্ব বাংলায় মূল লাহোর প্রস্তাবের এ দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন হয়। যেমন- ৫৪ সালের ২১ দফা, ছয়দফা, ১১ দফা ইত্যাদি।
৫. বাংলাদেশের জন্ম : লাহোরের প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব বাংলায় স্বায়ত্তশাসন প্রদান না করার কারণে পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই সেখানে বিভিন্ন আন্দোলন হতে থাকে। পরবর্তীতে ‘৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী হবার পর পূর্ব বাংলাকে তারা ক্ষমতা না দেওয়ার কারণে বাঙালিরা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লাহোর প্রস্তাব পেশ করার পর থেকে মুসলমানরা তাদের আন্দোলনের একটি নির্দিষ্ট পথ অর্জন করে। এর অনিবার্য ফলাফল স্বরূপ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং এর সুদূরপ্রসারী ফল হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়।