যৌথ পরিবারের সুবিধাগুলো কী কী?
অথবা, যৌথ পরিবারের ইতিবাচক দিক কী কী? আলোচনা কর।
যৌথ পরিবারের সুলগুলো আলোচনা কর।
অথবা, যৌথ পরিবারের কী কী ভাল দিক আছে? আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : যৌথ পরিবারের অস্তিত্ব ধীরে ধীরে বিলীন হতে যাচ্ছে। তবুও বলা চলে যে, যেসব যৌথ পরিবার আজও টিকে আছে তারা এর থেকে কিছু সুবিধা ভোগ করে এবং যৌথ পারিবারিক ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যৌথ পরিবারের সুবিধা : নিম্নে যৌথ পরিবারের সুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. অর্থনৈতিক অগ্রগতি : অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য যৌথ পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। একজন ব্যক্তির আয়ের দ্বারা ব্যক্তি তার অর্থনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারে না, অথচ সকলের আয় একসাথে কাজে লাগিয়ে বৃহৎ ব্যবসায় কিংবা বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়। তাই বলা হয়ে থাকে যে, “It is an essential condition of national progress that citizen must at least two meals a day, joint family provides this to its members and thus enables them to devote themselves to nations progress.”
২. সামাজিক নিরপত্তা : সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যৌথ পরিবার তাদের সদস্যদের জন্য যথাযথ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবারের মহিলাগণ তাদের ঘরের কাজগুলো যেমন- রান্নাবান্না, ধোয়া-মোছা প্রভৃতি নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। তাছাড়া বাইরের প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলার জন্য পুরুষগণ তাদের যথার্থ ভূমিকা পালন করে।
অনেকে তাই যৌথ পরিবারের নিরাপত্তা বিনষ্ট করার সাহসও পায় না।
৩. অবসর যাপনের সুযোগ : যৌথ পরিবারের সদস্যগণ যথেষ্ট অবসর যাপনের সুযোগ পায়। কাজসমূহ ভাগ করে নেয়ার ফলে সকলের উপর কাজের চাপ ততটা পড়ে না ফলে তারা অধিক পরিমাণে অবসর পায়।
৪. শ্রমবণ্টন : যৌথ পরিবারে শ্রম বিভাগের মাধ্যমে শ্রমবণ্টিত হয় অর্থাৎ যে যে কাজ পারে তাকে সে কাজ দেয়া হয়। এর দ্বারা পরিবারে সকল সদস্যদের সামর্থ্যকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়।
৫. বৃহৎ উৎপাদন : যৌথ পরিবারের মূল আকর্ষণ হলো বৃহৎ অর্থনীতি। আমরা দেখি যে, যদি বড় বড় জোত জমিগুলো খণ্ডখণ্ড হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সেখানকার উৎপাদন লাভজনক হতে পারে না। যৌথ পরিবার মূলত খণ্ডখণ্ড জমিগুলো একত্রিত করে বৃহৎ উৎপাদনকে সম্ভব করে এবং বেশি পরিমাণে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
৬. ব্যয় সংকাচন : ব্যয় সংকোচন যৌথ পরিবারের অন্যতম সুবিধা। যৌথ পরিবারে সাধারণত এককালীন বাজার সদাই করা হয় এবং সেটি একক পরিবারের পরিমাণের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। বেশি পরিমাণে কেনার ফলে দামও তুলনামূলক কম পড়ে। এর ফলে অপেক্ষাকৃত কম খরচে সকলের ভরণপোষণ সম্ভব হয়।
৭. সমানাধিকার বিদ্যমান : যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক আদর্শের অনুকরণে সমানাধিকার বিদ্যমান থাকে। যৌথ পরিবারের প্রত্যেক সদস্য নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে রুজিরোজগার করে এবং প্রত্যেক প্রয়োজন অনুসারে ভোগ করে। সকলের রোজগার পরিবারের তহবিলে জমা করা হয়। এর ফলে যৌথ পরিবারের আর্থিক সংকট থাকে না।
৮. দেশের যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি : দেশের উন্নতির জন্য যোগ্য ও সুনাগরিকের প্রয়োজন। যৌথ পরিবার তার সদস্যদের মধ্যে সামাজিক গুণাবলি ও ব্যক্তির সুকুমার বৃত্তিগুলো যথাযথ বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেমন—পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, স্বার্থত্যাগ, উদার হৃদয়বত্তা প্রভৃতি গুণাবলি যৌথ পরিবারের মধ্যে ব্যক্তি অর্জন করার সুযোগ লাভ করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যৌথ পরিবারের সংখ্যা পৃথিবীতে কম হলেও একবারে যে নেই তা নয়। যে কয়টি যৌথ পরিবার আজও টিকে আছে তার মূল কারণ হলো পারস্পরিক সহযোগিতা, বৃহৎ মানসিকতা, স্বার্থহীনতা ইত্যাদি। সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে, যৌথ পরিবারের নানাবিধ সুবিধাসমূহ যৌথ পরিবার
গঠনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।