General Knowledge

যৌথ পরিবারের অসুবিধাসমূহ কী কী?

অথবা, যৌথ পরিবারের নেতিবাচক দিকগুলো আলোচনা কর।
অথবা, যৌথ পরিবারের কুফলগুলো বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
যৌথ পরিবারের যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু মৌলিক অসুবিধা। এর ফলে দেখা যায় যে, যেসব যৌথ পরিবার এসব অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে না পারে তারা যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার গঠন করে।
যৌথ পরিবারের অসুবিধা : নিম্নে যৌথ পরিবারের অসুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. ক্ষমতার দ্বন্দ্ব : যৌথ পরিবারের প্রধান অসুবিধা হলো একক নিয়ন্ত্রণ। অনেক সময় একক নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব ব্যক্তির মানসিক বিকাশ ও স্বাধীনতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর থেকে সৃষ্টি হয় অবিশ্বাস এবং এটি পরিণতিতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ক্ষেত্রে উপযোগী হয় না।
২. দায়িত্বহীনতা ও কর্মবিমুখতা : যৌথ পরিবারের অন্যতম বড় অসুবিধা হলো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দায়িত্বহীনতা ও কর্তব্যবিমুখতা। অনেক সময় দেখা যায় যে, পরিবারে সদস্যগণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তার কারণে অলস প্রকৃতির হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়ে থাকে যে, in the joint family it happens.
that some people have to exhaust themselves while the other lead a life of utter lethargy.”
৩. মতানৈক্য : যৌথ পরিবারগুলো অনেক সময় অনেক ছোটখাটো বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে পারে না। পরিবারে মহিলা সদস্যদের মধ্যে ঈর্ষা, বাচ্চাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ, মনোমালিন্য প্রভৃতি লেগেই থাকে। এর ফলে অনেক সময় প্রবীণদের মধ্যেও মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। এসম্পর্কে বলা যেতে পারে যে, “It is the hotbed of quarrels and bickering especially among the female members.”
৪. মালিকানার বিরোধ : সম্পত্তির মালিকানার বিরোধ যৌথ পরিবারে বেশি দেখা যায়। সম্পত্তির অধিকার যদি সমভাবে প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে এ ধরনের সমস্যা থেকেই যাবে।
৫. মূলধনের কোন্দল : যৌথ পরিবারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে যে মূলধনের পাহাড় গড়ে উঠে তাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় কোন্দল শুরু হয়। যৌথ মালিকানার ফলে সে মূলধনের সুবিধা অনেকে নিতে পারে না। ফলে ব্যক্তির মধ্যে একটি ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তা পরিণতিতে পারিবারিক তিক্ততার সৃষ্টি করে।
৬. ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে বিঘ্নের সৃষ্টি : যৌথ পরিবার ব্যবস্থার মধ্যে ব্যক্তির স্বাধীন, স্বতঃস্ফূর্ত ও পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশের বাধাপ্রাপ্ত হয়। কারণ পরিবারের সদস্যদের স্বাধীন সত্তা ও স্বনির্ভরতার কোনপ্রকার সুযোগ সুবিধা ও পরিবার কাঠামোতে নেই। যৌথ পরিবারের এ ধরনের পরিবেশ পরিস্থিতিই ব্যক্তিস্বাধীনতা বিকাশের বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
৭. নববধূদের পরাধীনতা : বিশেষ করে নববধূদের পরিপূর্ণভাবে পরাধীন জীবনযাপন করতে হয়। বধূর উপর অনেক সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা এতই বেড়ে যায় যে, শেষ পর্যন্ত নববধূর আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না । ক্রীতদাসীর মতো পরিবারের সদস্যদের সেবাযত্ন করতে হয় । অর্থাৎ তাদেরকে পরাধীন জীবনযাপন করতে হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, যৌথ পরিবারের সংখ্যা পৃথিবীতে কম হলেও যে নেই তা নয়। যে কয়টি যৌথ পরিবার আজও টিকে আছে তাদের মূল কারণ হিসেবে বলাচলে পারস্পরিক সহযোগিতা, বৃহৎ মানসিকতা, স্বার্থহীনতা প্রভৃতি। নানাবিধ সুবিধা কিংবা অসুবিধার প্রতি খেয়াল রেখেও বলা চলে যে, যৌথ পরিবারের আইন এটির অস্তিত্বের পক্ষে খুবই জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!