যোগের লক্ষণ সম্পর্কে লিখ।
অথবা, যোগদর্শনের লক্ষণ সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, যোগদর্শনের লক্ষণগুলো কী কী?
অথবা, যোগদর্শনের লক্ষণ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : আত্মা ও অধ্যাত্ম বিষয়ে সাক্ষাৎ উপলব্ধির জন্য যোগের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা বেদে, উপনিষদে, স্মৃতিতে, পুরাণে এবং প্রায় সব ভারতীয় দর্শনে স্বীকৃত হয়েছে। মুক্তি লাভের পথে যোগদর্শন নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া খুবই সহায়ক। মনে যদি স্থিরতা ও সুচিতা না থাকে তবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয় এবং যোগদর্শন নির্দিষ্ট সাধনাই আত্মশুদ্ধির প্রশস্ত পথ। যোগদর্শনে যোগের লক্ষণ ও প্রকারভেদ রয়েছে। এছাড়াও যোগদর্শনে ত্রিতাপ বা তাপত্রয়ের ভূমিকা রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যোগের লক্ষণ : যোগদর্শন মতে চিত্তবৃত্তি নিরোধই ‘যোগ’। যোগদর্শনে ‘যোগ’ শব্দকে সংযোগ অর্থে ব্যবহার করা হয় নি। সমাধি অর্থেই ব্যবহার করা হয়েছে। পুরুষ বা আত্মা ভ্রমবশত নিজেকে মন, বুদ্ধি ও অহংকার হতে অভিন্ন মনে করে। পুরুষ বা আত্মার এ ভ্রান্ত জ্ঞান বিনাশ করে তার মধ্যে বিবেক জ্ঞানের প্রতিষ্ঠা করাই যোগের উদ্দেশ্য। কিন্তু চিত্তের বৃত্তি যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত পুরুষের চৈতন্য তাতে প্রতিবিম্বিত হবে। ফলে চিত্তের বৃত্তি পুরুষের বৃত্তি বলে প্রতীয়মান হবে এবং ঐ অবস্থায় পুরুষের মধ্যে বিবেক জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই যোগদর্শনে চিত্তবৃত্তি নিরোধের কথা বলা হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যোগাচার্যগণ যোগ সাধনার দ্বারা যোগীর চিত্তের মলিনতা এবং অশুদ্ধতা দূর হয় বলে মনে করেন। যোগশাস্ত্রকার যম, নিয়ম, আসনাদির অনুশীলনের মাধ্যমে চিত্তের যে অশুদ্ধি, ক্ষয় ও মালিন্য দূর করার কথা বলেছেন। আত্মসাক্ষাৎকারের জন্য তার প্রয়োজনীয়তা সব ভারতীয় দর্শনেই স্বীকৃত হয়েছে। আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে কতকগুলো ব্যবহারিক বিধির নির্দেশ দিয়ে আত্মসাক্ষাৎকারের পথকে সুগম করে দিয়েছেন যোগশাস্ত্রকারেরা।