General Knowledge

যোগের অষ্ট অঙ্গ হিসেবে যম ব্যাখ্যা কর।

অথবা, যোগদর্শনে যম কী?
অথবা, যোগ দর্শনে যম কাকে বলে?
অথবা, যোগ অষ্ট অঙ্গের যম ব্যাখ্যা কর।
অথবা, যোগ দর্শনে যম বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা :
মহর্ষি পতঞ্জলি ‘যোগদর্শনের’ প্রবর্তক এবং প্রতিষ্ঠাতা। পতঞ্জলির নামানুসারে ‘যোগদর্শনকে’ পাতঞ্জলদর্শনও বলা হয়। যোগদর্শনের আদিম গ্রন্থ হলো ‘যোগসূত্র’ বা ‘পাতঞ্জল সূত্র’। বেদব্যাস রচিত ‘যোগভাষ্য’ যোগসূত্রের একটি মূল্যবান ভাষ্য। যোগদর্শনে আত্মোপলব্ধির জন্য অষ্ট অঙ্গের উদ্ভব হয়েছে। যোগদর্শন মতে আত্মার উপলব্ধিই মুক্তির কারণ। কিন্তু আত্মোপলব্ধি করতে হলে প্রয়োজন শুদ্ধ, স্থির ও শান্ত চিত্তের। চিত্তকে শুদ্ধ ও শান্ত করার জন্য যোগদর্শনে অষ্টবিধ অনুশীলনের উপদেশ দেয়া হয়েছে। যথা : ১. যম, ২. নিয়ম, ৩. আসন, ৪. প্রাণায়াম, ৫. প্রত্যাহার, ৬. ধারণা, ৭. ধ্যান ও ৮. সমাধি 1
যোগের অষ্ট অঙ্গ হিসেবে যম : অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য এবং অপরিগ্রহ-এ পাঁচটি সাধনকে যম বলা হয়। অহিংসার অর্থ হলো কায়িক, বাচনিক ও মানসিক ক্রিয়া দ্বারা অপরকে আঘাত না করা বা অপরকে কোনভাবে ব্যথিত না করা। চিন্তায় বা বাক্যে মিথ্যাচরণ না করাই সত্য। অর্থাৎ যা যথার্থ; মনে ও বাক্যে তা মনে করা ও বলাই সত্য।
অল্পভাষিতা অভ্যাস করাই সত্যসাধনের প্রকৃষ্ট পথ। যা নিজের নয় এমন দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকাই অস্তেয়। কামবিষয়ক আচরণ এবং চিন্তা থেকে বিরত থাকাই ব্রহ্মচর্য। কেবল প্রাণ ধারণের উপযুক্ত দ্রব্য গ্রহণই অপরিগ্রহ। যে ব্যক্তি প্রয়োজনাতিরিক্ত ভোগ্য বস্তুর অধিকারী তার যোগসিদ্ধি হয় না। উল্লিখিত এ পাঁচ প্রকার যম যদি জাতি, দেশ, কাল ও সময়ের দ্বারা অবিচ্ছিন্ন না হয় তাহলে সে সার্বভৌম যম মহাব্রত বলে গণ্য হয়। যম সাধনের উপর যোগদর্শনে এতখানি গুরুত্বারোপ করার কারণ, ইন্দ্রিয়াসক্ত, বিষয়ভোগী ও অসংযতচিত্ত ব্যক্তি কখনো যোগসাধনার দুর্গম পথে অগ্রসর হতে পারে না। সে কারণে প্রয়োজন যম সাধনার দ্বারা চিত্তকে সর্বপ্রথম অশুদ্ধির মালিন্য থেকে মুক্ত করা। যোগশাস্ত্র মতে অহিংসা প্রতিষ্ঠ যোগীদের সান্নিধ্যে হিংস্র প্রাণীও তার স্বাভাবিক হিংসাভাব পরিত্যাগ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যোগ সাধনার বিভিন্ন স্তরে যোগী বিভিন্ন অলৌকিক শক্তি লাভ করেন। যোগদর্শন মতে সিদ্ধি লাভ যোগ সাধনার চরম লক্ষ্য নয়; আত্মজ্ঞান বা মুক্তি লাভই যোগ সাধনার প্রকৃত উদ্দেশ্য। সুতরাং আত্মজ্ঞান বা মুক্তি লাভ না হওয়া পর্যন্ত যোগীকে নীরব সাধনা করে যেতে হবে। সিদ্ধির প্রলোভনে প্রলুব্ধ হলে যোগী যোগভ্রষ্ট হবে এবং মুক্তি লাভে বঞ্চিত হবে। এ যোগশাস্ত্রকারেরা সিদ্ধির প্রলোভনে প্রলুব্ধ না হয়ে মুক্তির সাধনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!