অথবা, যোগদর্শনের তাপত্রয় ব্যাখ্যা কর।
অথবা, যোগদর্শনের ত্রিতাপ বলতে কী বুঝ?
অথবা, যোগদর্শনের তাপত্রয় কী?
অথবা, যোগদর্শনের ত্রিতাপ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : মহর্ষি পতঞ্জলি যোগদর্শনের প্রবর্তক এবং প্রতিষ্ঠাতা। মহর্ষি পতঞ্জলির নামানুসারে এ দর্শনের নাম পাতঞ্জল দর্শন। পাতঞ্জল দর্শনকে সাংখ্য প্রবচন নামেও অভিহিত করা হয়। তার কারণ মহর্ষি পতঞ্জলি কপিল মুনি প্রবর্তিত সাংখ্যমত স্বীকার করে সাংখ্য প্রবর্তিত পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব; যথা : পুরুষ, প্রকৃতি, মহত্তত্ত্ব, অহংকার, পঞ্চতন্মাত্র,
একাদশ ইন্দ্রিয় এবং পঞ্চ মহাভূত স্বীকার করেছেন। পূর্বোক্ত পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব ছাড়া আরো একটি তত্ত্ব পাতঞ্জল দর্শনে স্বীকৃত হয়েছে। এ তত্ত্বটি হলো ঈশ্বর তত্ত্ব। এ কারণে পাতঞ্জল দর্শনের অপর নাম ‘সেশ্বর-সাংখ্য।’
যোগদর্শনের ত্রিতাপ বা তাপত্রয় (The three fold pain of the yoga philosophy) : যোগদর্শন ভারতীয় অন্যান্য দর্শনের মত জগতকে দুঃখময় বলেছে। যোগ দার্শনিকদের মতে, দুঃখ তিন প্রকারের। যথা : ১. পরিণাম দুঃখ, ২. তাপ দুঃখ ও ৩. সংস্কার দুঃখ।
১. পরিণাম দুঃখ : সাধারণ লোকের ধারণা, জগতে দুঃখ যেমন আছে, তেমনি সুখও আছে। কিন্তু যোগ দার্শনিকগণ বলেছেন, সকল সময় সুখপ্রদ এমন কোন বস্তু বা বিষয় জগতে নেই। কারণ জগৎ পরিবর্তনশীল; সুতরাং সুখপ্রদ বস্তু বা বিষয়েরও পরিবর্তন আছে। সুখপ্রদ বস্তু বা বিষয়ের পরিবর্তনের ফলে বিয়োগজনিত দুঃখের সৃষ্টি হয়। তাই কোন বস্তু আপাতত সুখ প্রদান করলেও পরিণামে তা দুঃখ প্রদান করবে। তদুপরি সুখ ভোগের দ্বারা সুখভোগের তৃষ্ণা নির্ধারিত হয় না, বরঞ্চ তা বৃদ্ধি পায়। ফলে পরিণাম দুঃখপ্রদ হয়।
২. তাপ দুঃখ : দ্বেষজাত দুঃখই তাপ দুঃখ। ইন্দ্রিয় সুখে আসক্ত ব্যক্তির সুখ প্রাপ্তির পথে অন্য কোন বস্তু বা কোন ব্যক্তি যদি বাধা সৃষ্টি করে। তবে বাধা প্রদানকারীর প্রতি সুখে আসক্ত ব্যক্তির মনে দ্বেষ জন্মে। দ্বেষ দুঃখজনক। কারণ দ্বেষ মনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং এ চাঞ্চল্যের জন্য যেসব কর্ম করা হয় তার ফলাফল সব সময় আশানুরূপ হয় না বলে মনে দুঃখ হয়।
৩. সংস্কার দুঃখ : সংস্কার হতে যে দুঃখের সৃষ্টি হয় তাই সংস্কার-দুঃখ। সুখ এবং দুঃখের অনুভূতির ফলে জীবের মনে সংস্কার উৎপন্ন হয়। সুখানুভূতি সুখ-সংস্কারের এবং দুঃখানুভূতি দুঃখ-সংস্কারের সৃষ্টি করে। যোগ দার্শনিকগণ বাসনাকে সংস্কার অর্থে গ্রহণ করেছেন। এ সুখ-সংস্কারের ফলে জীব বার বার সুখপ্রদ বস্তু বা বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয়
এবং দুঃখ-সংস্কারের ফলে দুঃখপ্রদ বস্তু বা ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়। ফলে পুনরায় দুঃখ ভোগ করে।পরিশেষে বলা যায় যে, যোগাচার্যগণ যোগ সাধনার দ্বারা যোগীর চিত্তের মলিনতা এবং অশুদ্ধতা দূর হয় বলে মনে করেন। যোগশাস্ত্রকার যম, নিয়ম, আসনাদির অনুশীলনের মাধ্যমে চিত্তের যে অশুদ্ধি, ক্ষয় ও মালিন্য দূর করার কথা বলেছেন। আত্মসাক্ষাৎকারের জন্য তার প্রয়োজনীয়তা সব ভারতীয় দর্শনেই স্বীকৃত হয়েছে। আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে কতকগুলো ব্যবহারিক বিধির নির্দেশ দিয়ে আত্মসাক্ষাৎকারের পথকে সুগম করে দিয়েছেন যোগশাস্ত্রকারেরা।

ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079