Other

মৌলিক মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য লিখ।

অথবা, মৌলিক মনোবিজ্ঞান ও শিল্প মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যগুলো কী কী? উত্তর:

ভূমিকা : মনোবিজ্ঞান হল মানুষ ও প্রাণীর আচরণ এবং মানসিক প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিজ্ঞান। এটি জ্ঞানের অতি বিশ্লেষণধর্মী শাখা, যা মানুষের আচরণকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে। মনোবিজ্ঞান শুধু আচরণ সম্পর্কে মৌলিক গবেষণা করে না বরং এর প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক দিক সম্পর্কেও আলোচনা করে। মানুষের আচরণ সম্পর্কিত গবেষণা এ বিজ্ঞানের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে আরও বেশি তথ্যবহুল করেছে। ব্যবহারিক জ্ঞানের সাহায্যেও মানুষ বাস্তবিক সমস্যা সমাধানে পদ্ধতি শিখেছে।

মৌলিক ও ফলিত মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য : মৌলিক মনোবিজ্ঞান এবং শিল্প মনোবিজ্ঞানের মধ্যে একটি মৌলিক সম্পর্ক বিদ্যমান। কারণ শিল্প মনোবিজ্ঞান নামে যে বিষয়টি আমরা পাঠ করছি সেটি আসলে মৌলিক মনোবিজ্ঞানেরই একটি প্রায়োগিক বা ফলিত শাখা। সে কারণে বিষয় দু’টির মধ্যে সম্পর্ক থাকা খুবই স্বাভাবিক। তারপরও মৌলিক মনোবিজ্ঞান এবং শিল্প মনোবিজ্ঞানের মধ্যে কতকগুলো পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এ পার্থক্যগুলো নিয়ে ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো :
পার্থক্যের বিষয়:

১. সংজ্ঞা:

মৌলিক মনোবিজ্ঞান:মৌলিক মনোবিজ্ঞান বলতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণ অধ্যয়ন ও ব্যাখ্যাকারী শাস্ত্রকে বুঝায় ।

শিল্প মনোবিজ্ঞান:মনোবিজ্ঞানের যে শাখা শিল্পকারখানা ও ব্যবসায় ক্ষেত্রে সংঘঠিত মানব আচরণের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দান করে তাকে শিল্প মনোবিজ্ঞান বলা হয়।

২. শাখা:

মৌলিক মনোবিজ্ঞান:মৌলিক মনোবিজ্ঞান জ্ঞানের একটি মূল্যবান শাখা।

শিল্প মনোবিজ্ঞান:শিল্প মনোবিজ্ঞান মৌলিক মনোবিজ্ঞানের প্রায়োগিক শাখা।

৩. লক্ষ্য:

মৌলিক মনোবিজ্ঞান:মানুষের মানসিক প্রতিক্রিয়ার স্বরূপ এবং বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করাই হচ্ছে মৌলিক মনোবিজ্ঞানের প্রকৃত লক্ষ্য।

শিল্প মনোবিজ্ঞান:শিল্পকারখানায় কর্মরত জনশক্তিকে সঠিক ব্যবহার এবং শিল্পের প্রত্যাশিত উৎপাদন নিশ্চিত করাই শিল্প মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য।

৪. বিষয়বস্তু:

মৌলিক মনোবিজ্ঞান:মৌলিক মনোবিজ্ঞানের প্রকৃত বিষয়বস্তু হলো সংবেদন, প্রত্যক্ষণ, স্মৃতি, প্রেষণা, অনুভূতি ও আবেগ, ব্যক্তিত্ব, শিক্ষণ, চেতনা প্রভৃতি ।

শিল্প মনোবিজ্ঞান:শিল্প মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হলো কর্ম ও কর্মী বিশ্লেষণ, কর্মচারী নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, কর্মদক্ষতা ও ক্লান্তি, শৈল্পিক দুর্ঘটনা, মানবিক সম্পর্ক, কর্মসন্তুষ্টি ও মনোবল, বিজ্ঞাপন ও ভোক্তা জরিপ ইত্যাদি।

৫. ব্যাপকতা:

মৌলিক মনোবিজ্ঞান:মৌলিক মনোবিজ্ঞানের পরিধি ও পরিসর অনেক ব্যাপক। এটি সব ধরনের মানুষের আচরণ মানসিক সমস্যাবলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।

শিল্প মনোবিজ্ঞান:শিল্প মনোবিজ্ঞানের পরিধি ও পরিসর ব্যাপক নয়। এটি শুধুমাত্র শিল্পে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।

৬. সমস্যা

মৌলিক মনোবিজ্ঞান:মৌলিক মনোবিজ্ঞান সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির মানসিক ও আচরণগত সমস্যাগুলো আলোচনা করে এবং সমাধানের নির্দেশনা দেয়।

শিল্প মনোবিজ্ঞান:শিল্প মনোবিজ্ঞান শিল্পে কর্মরত ব্যক্তিদের সৃষ্ট সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের চেষ্টা করে।

৭. অবদান:

মৌলিক মনোবিজ্ঞান:মৌলিক মনোবিজ্ঞান সমগ্র মানবসমাজের মানবীয় ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলো সমাধানের সাহায্যে সমাজ ও ব্যক্তি উন্নয়নে অবদান রাখে ।

শিল্প মনোবিজ্ঞান:শিল্প মনোবিজ্ঞান শিল্প কর্মীদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাবলি নিরসনের মাধ্যমে সমস্ত শিল্পক্ষেত্রের উন্নয়নে অবদান রাখে।

৮. বিষয়গত প্রকৃতি:

মৌলিক মনোবিজ্ঞান:মৌলিক মনোবিজ্ঞান সাধারণত তাত্ত্বিক প্রকৃতির।

শিল্প মনোবিজ্ঞান:শিল্প মনোবিজ্ঞান মূলত প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক প্রকৃতির।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে একজন মনোবিজ্ঞানীর দায়িত্ব অতুলনীয়। প্রকৃতপক্ষে মনোবিজ্ঞানের একটি ফলিত শাখা হিসেবে শিল্প মনোবিজ্ঞান যেসব আচরণ কর্মীর উৎপাদন ক্ষমতা ও শিল্পের উৎপাদন ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলে সে আচরণের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ করে থাকে। এ বিষয়ে শিল্প মনোবিজ্ঞানী শিল্পে নিয়োজিত জনশক্তির মূল্যবোধের নির্ভুল মূল্যায়ন এবং চরম লক্ষ্য অর্জনের পথ বিস্তারিত করার পদ্ধতিকে সহজতর করেন। এ কারণেই বর্তমানে উন্নত বিশ্বের অনুকরণ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোও শিল্প মনোবিজ্ঞানকে পর্যাপ্ত গুরুত্বসহকারে গবেষণা করছে এবং একজন শিল্প মনোবিজ্ঞানীকেও যথেষ্ট মূল্যায়ন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!