মোহাম্মদ বরকতুলাহর জীবনদর্শন সম্পর্কে লেখ।
অথবা, কাক্কুল্লাহর জীবনদর্শনের প্রকৃতি কীরূপ?
তুল্লাহর জীবনদর্শন ব্যাখ্যা কর।
অথবা, কন্নাহর জীবনদর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে লেখ।
উত্তর।। ভূমিকা : প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বাংলা ভূখণ্ডে যেসব দার্শনিক দর্শনতত্ত্ব প্রচার করেছেন। তারাই বাঙালি দার্শনিক। তাদের দর্শনই বাঙালি দর্শন। বাঙালি দর্শনে যাদের অবদান রয়েছে মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি তার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা দ্বারা বাঙালি দর্শনের ইতিহাসে বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছেন। তাঁর জীবনদর্শন বাঙালি দর্শনকে সমৃদ্ধ করেছে।
মোহাম্মদ বরকতুল্লাহর জীবনদর্শন : লেখক, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক হিসেবে মোহাম্মদ বরকতুল্লাহর খ্যাতি ছাড়িয়ে পড়ে তাঁর “মানুষের ধর্ম” নামক গ্রন্থ প্রকাশিত হবার পর। নিম্নে তার জীবনদর্শনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো :
১. আত্মা : ভুল্লাহর মতে, দার্শনিক চিন্তার কেন্দ্রীয় প্রতিপাদ্য বিষয় হলো আত্ম প্রতিষ্ঠা। জগতের সকল প্রাণীর মধ্যেই এ বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। তবে অন্যান্য প্রাণী অপেক্ষা মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। মানুষ অর্জন করেছে আত্মা নামক বিশেষ শক্তি। আত্মাও অমরত্বে অভিলাষী। আত্মা নিজস্ব জগতে বেঁচে থাকবে এবং কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। এ কারণে মানুষের পারলৌকিক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। গড়ে উঠেছে স্বর্গ নরকের ধারণা।
২. জ্ঞানলাভের উপায় : বহির্ভাগৎ সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের বাহন মানুষের ইন্দ্রিয়। কিন্তু ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে সবকিছু জানা যায় না। তাই জ্ঞানার্জনের মাধ্যম হিসেবে তিনি বুদ্ধির পাশাপাশি প্রবৃত্তি ও স্বজ্ঞার কথা স্বীকার করেন। স্বজ্ঞাকে বলা হয় অতীন্দ্রিয় অনুভব শক্তি।
৩. পরমাত্মা : জ্ঞান ও সত্যের প্রকৃত সাধক গভীর মনোযোগ দ্বারা পরম চেতনার সন্ধান পেয়েছেন। জড় দেহ বিনষ্ট হলেও আত্মা অমর। বিশ্ব চরাচর জুড়ে প্রবহমান রয়েছে একটি প্রেরণা, অভিব্যক্তি; যা জড় জগৎসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করছে, পরিচালনা করছে। মানুষের লক্ষ্য এ চালক বা নিয়ন্ত্রকের সাথে একাত্ম হওয়া। আত্মা এ নিয়ন্ত্রকের সাথে মিলতে চায়। এ নিয়ন্ত্রকই হলো পরমাত্মা।
৪. নীতিবোষ : ন্যায়, নীতি, কল্যাণ, সৌন্দর্য প্রভৃতি মানবজীবনের তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। এগুলো মানবজীবনের জন্য ঐশ্বর্যস্বরূপ। এগুলোর স্বীকৃতি, ধারণ ও পালনের মধ্য দিয়ে জীবনের তাৎপর্য অনুধাবন করা যায়। এগুলোকে অস্বীকার হরে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে কল্যাণ আনয়ন সম্ভব হয় না। তাই ন্যায় ও সুনীতিকে মান্য করা আমাদের একান্ত আবশ্যক। নীতিবোধ সকলের মধ্যে জাগ্রত থাকলেই স্থায়ী কল্যাণ বিরাজ করে।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ তার জীবনে আত্মস্বার্থে ব্যাপৃত না হয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা ভেবেছেন। তাঁর জীবনে তিনি স্বজ্ঞাকে গ্রহণ করে দর্শন রচনা করেছেন যা ন্যায়নীতির ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি জ্ঞানলাভের জন্য স্বজ্ঞাকে স্বীকার করার পাশাপাশি অন্যান্য মাধ্যমকেও স্বীকার করেছেন। বাঙালি জীবনদর্শনে তার অবদান অনস্বীকার্য।