মোহাম্মদ বরকতুলাহর অতীন্দ্রিয় অনুভব শক্তি সম্পর্কিত মতবাদটি কী?
অথবা, বরকতুল্লাহর অতীন্দ্রিয় অনুভব শক্তি তত্ত্বটি কী?
অথবা, বরকতুল্লাহ অতীন্দ্রিয় অনুভব শক্তি বলতে কী বুঝিয়েছেন?
অথবা, অতীন্দ্রিয় অনুভব শক্তি তত্ত্বটি কী?
উত্তর।৷ ভূমিকা : বাঙালি দর্শন ও সাহিত্য অঙ্গনে মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। তিনি তাঁর কর্মময় জীবনের মধ্যেও গভীর দর্শন ও সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি জগৎ ও জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্বালোচনা করেছেন, অতীন্দ্রিয় অনুভব শক্তি তত্ত্বটি তার মধ্যে অন্যতম। বাঙালি দর্শনে তিনি একজন সজ্ঞাবাদী দার্শনিক হিসেবেই পরিচিত।
অতীন্দ্রিয় অনুভব শক্তি : বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বস্তুবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবিত উন্নতির ফলে ধর্ম বিশ্বাস যে এক বড় রকমের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন সে সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্য ছিল যুক্তিপূর্ণ।অসীমের সাথে সলীমের যোগাযোগ কিভাবে সম্ভব এ সম্পর্কে মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ বলেন, সহজ ইন্দ্রিয় সংস্কার, বুদ্ধি প্রভৃতি আমাদের প্রচলিত জ্ঞানের বাহন। কিন্তু এদের সাহায্যে পরম স্যার সন্ধান পাওয়া যায় না। তাই বলে পরম সতা যে অজ্ঞের এমন কথা বলা চলে না। কারণ ইন্দ্রিয় সংস্কার বুদ্ধি প্রভৃতি ছাড়াও মানব মনের জন্য একটি শক্তি আছে যার সাহায্যে পরম সত্তার সন্ধান/সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এ শক্তিই হলো স্বজ্ঞা বা অতীন্দ্রিয় অনুভ শক্তি (Intuition)।স্বজ্ঞার মাধ্যমে আমরা সরাসরি অবহিত হই আমাদের নিজ নিজ অস্তিত্ব ও চেতনা সম্পর্কে। এ স্বজ্ঞা যখন পরিগত অবস্থায় এসে উপনীত হয়, তখন এর আলোকেই মানুষ গরম সতাকে দেখতে পায় এবং উপলব্ধি করতে পারে সে সবার সাথে নিজের সম্বন্ধকে। স্বজ্ঞাকে যুক্তি-বিচারের মাধ্যমে পাওয়া যায় না। তাই যুক্তি-বুদ্ধির কাছে স্বজ্ঞা জ্ঞানীয় মূল্য নেই। কিন্তু সজ্ঞাবাদীরা স্বজ্ঞাকে জ্ঞানীয় মূল্য দিয়ে যুক্তিবুদ্ধির উপরে স্থান দেন, যেখানে নৈয়ায়িক ও খতবুদ্ধির বিচরণ অসম্ভব।
বরকতুল্লাহ স্বজ্ঞা শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন প্রগাঢ় মরমি অভিজ্ঞতার অর্থে। বস্তুত স্বজ্ঞা বলতে বরকতুল্লাহ সুঞ্জি বা যোগীদের নিছক নিষ্ক্রিয় ম্যান অনুধ্যানকে বুঝেন নি, বুঝেছেন কাজ্ঞান ও ভেদবুদ্ধির উত্তীর্ণ আনের সে উচ্চতর ও অধিকতর ফলপ্রসু বাহনকে যার কথা বলেছেন বার্গসোসহ অন্যান্য সজ্ঞাবাদী দার্শনিক জ্ঞান। জ্ঞানের এ বাহন কোন আপতিকভাবে প্রাপ্ত কিংবা সহজলভ্য ব্যাপার নয়। একে অর্জন করতে হয় সুকঠিন অনুশীলন ও অধ্যবসায়ের দ্বারা, বরকতুল্লাহর ভাষায় কঠোর তপস্যার মাধ্যমে।
উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, বরকতুল্লাহ অতীন্দ্রিয় অনুভব শক্তির যে বর্ণনা দিয়েছেন তা ভাববাদ বা অধ্যাত্মবাদের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাঁর পূর্বে বহু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দার্শনিক এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। জ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি স্বজ্ঞা, বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়, অভিজ্ঞতা প্রভৃতির ভূমিকাকেও স্বীকার করেছেন তবে স্বজ্ঞাকে উচ্চতর মহান দান করেছেন। তিনি প্রকৃত অর্থেই একজন স্বজ্ঞাবাদী দার্শনিক। তাঁর আলোচনায় অভিনবত্ব রয়েছে।