মহাবীরের পরিচয় দাও।
অথবা, মহাবীর কে ছিলেন?
অথবা, জৈন ধর্মের শেষ তীর্থঙ্কর কে?
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে যে কয়েকটি দার্শনিক সম্প্রদায় রয়েছে তার মধ্যে একটি অন্যতম সম্প্রদায় হলো জৈন সম্প্রদায়। জৈন দর্শন অতি প্রাচীন দর্শন। জৈন দার্শনিকগণ দর্শনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন । জৈনদের দর্শন ছিল বিশুদ্ধ বস্তুবাদী দর্শন। তারা বিশ্বজগতের একটি পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা
করেছেন। বিশ্বজগতের ব্যাখ্যা প্রদান করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন সত্তার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
মহাবীরের পরিচয় : জৈন দর্শনের প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা মহাবীর বৈশালী নগরের এক ক্ষত্রিয় বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই স্থানটি বর্তমান পাটনার অনতিদূরে অবস্থিত ছিল। তার পিতার নাম সিদ্ধার্থ এবং মাতার নাম ছিল ত্রিশলা। তিনি গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক ছিলেন। তাঁর আবির্ভাবকাল (৫৬৯-৪৮৫ খ্রি. পূ.) খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক।
মহাবীর জৈন তীর্থঙ্কর ছিলেন : জৈন দর্শনের আবির্ভাব হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগে। যজুর্বেদে ঋষভ অজিতনাথ এবং অরিস্টনেমি নামে তিনজন তীর্থঙ্করের উল্লেখ এই প্রাচীনতা সূচিত করে। চব্বিশজন তীর্থঙ্কর এই ধর্মের প্রচারক। এদের সর্বপ্রথম তীর্থঙ্করের নাম ঋষভদেব আর সর্বশেষ তীর্থঙ্কর হলেন মহাবীর। মহাবীরের অপর নাম বর্ধমান।
মহাবীরের কৈবল্য লাভ: মহাবীরের বয়স যখন ত্রিশ বছর তখন তিনি তার ভাই নন্দীবর্ধনের অনুমতি গ্রহণ করে সন্ন্যাস জীবন বরণ করেন। বারো বছর কঠোর তপস্যার পর তিনি কৈবল্য লাভ করেন। ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি আরো বিয়াল্লিশ বছর জীবিত ছিলেন এবং গৌতম বুদ্ধের কিছুকাল পূর্বে তিনি পরলোকগমন করেন।
মহাবীর ‘জীন’ ছিলেন : তীর্থঙ্কর শব্দের অর্থ যিনি মানুষকে পথ দেখান। জৈনরা তীর্থঙ্করদেব জিন নামেও অভিহিত করেছেন। ‘জি’ ধাতুর অর্থ জয় করা। এ অর্থে মহাবীরকে জয়ী বলা হয়। তিনি ছিলেন জিন অর্থাৎ তিনি ষড়রিপু জয় করেছিলেন । জৈনদের মতে, মহাবীর স্বীয় সাধনার বলে রাগ, দেশ, কামনা-বাসনা জয় করে মোক্ষ লাভ করেছিলেন।
মহাবীর জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা : জৈন ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে যেসব গ্রন্থ আমরা পাই সেসব গ্রন্থে জৈনধর্ম ও দর্শনের যেসব উপদেশ ও বাণী আছে যা জৈন দর্শনের মূলমন্ত্র সেসব বাণী ও উপদেশ মহাবীরের অবদান বলে মনে করা হয়। কৈবল্য লাভের পর তিনি এসব বাণী ও উপদেশ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। জনশ্রুতি আছে যে, চব্বিশজন তীর্থঙ্কর
জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেও মহাবীর বাদে অন্যদের উপদেশ ও বাণী তেমন সুনির্দিষ্টভাবে পাওয়া যায় না। তাই মহাবীরকেই জৈনধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জৈন ধর্ম ও দর্শনের প্রচারক হিসেবে চব্বিশ জন তীর্থঙ্করের পরিচয় পাওয়া গেলেও জৈনধর্ম ও দর্শনকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে আসার যে কৃতিত্ব সে কৃতিত্বের দাবিদার শুধুমাত্র একজন। আর তিনি হলেন মহাবীর। এজন্য মহাবীরকে জৈন ধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় ।