General Knowledge

মহান মুক্তিযুদ্ধের যেকোনো দুটি সেক্টর সম্পর্কে লেখ ।

অথবা, মহান মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য সেক্টরগুলোর বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক প্রশাসন গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে বিরোধী শক্তির মোকাবিলায় অনুপ্রেরণা ও শক্তি যুগিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকবর্গের সীমাহীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক শোষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাংলার শিক্ষিত, অশিক্ষিত, কৃষক, মজুর, সামরিক-বেসামরিক প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরসমূহ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সামরিক প্রশাসনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. ১নং সেক্টর : ১নং সেক্টর গঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা এবং নোয়াখালী জেলার মুহুরী নদীর পূর্বাংশের সমগ্র এলাকা নিয়ে। এ সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ছিল হরিনাতে। সেক্টর প্রধান ছিলেন প্রথমে মেজর জিয়াউর রহমান এবং পরে রফিকুল ইসলাম। এ সেক্টরের অধীনে নিয়মিত ২,০০০ এবং গণবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল ৮,০০০ জন। এ বাহিনীর গেরিলাদের ১৩৭টি গ্রুপে দেশের অভ্যন্তরে পাঠানো হয়।
২. ২নং সেক্টর : মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টর ঢাকা, কুমিল্লা, এবং নোয়াখালী জেলার অংশ নিয়ে গঠিত হয়। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন প্রথমে মেজর খালেদ মোশাররফ এবং পরে মেজর এটিএম হায়দার। এ সেক্টরের অধীনে প্রায় ৩৫,০০০ এর মতো গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে। এ সেক্টরে নিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪,০০০ জন এবং ৩,০০০ এর মতো `গণবাহিনী বা গেরিলা ছিল।
৩. ৩নং সেক্টর : মুক্তিযুদ্ধের ৩নং সেক্টর গঠিত হয় উত্তরে সিলেটের চূড়ামনকাঠি এবং দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিঙ্গারবিল পর্যন্ত এলাকা নিয়ে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর কে. এম শফিউল্লাহ এবং পরে মেজর এ. এন. এম. নুরুজ্জামান। এ সেক্টরের অধীনে ১৯টি গেরিলা ঘাঁটি গড়ে উঠেছিল। নভেম্বর মাস পর্যন্ত গেরিলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ হাজার
এর মতো।
৪. ৪নং সেক্টর : মুক্তিযুদ্ধের ৪নং সেক্টর গঠিত হয়েছিল উত্তরে সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা থেকে দক্ষিণে কানাইঘাট পুলিশ স্টেশন পর্যন্ত ১০০ মাইল বিস্তৃত সীমান্ত এলাকা নিয়ে গঠিত। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত। এ সেক্টরের হেড কোয়ার্টার ছিল প্রথমে করিমগঞ্জ এবং পরে মাসিমপুরে। এ সেক্টরে গেরিলার সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ হাজার এবং নিয়মিত বাহিনী ছিল প্রায় ৪ হাজার।
৫. ৫নং সেক্টর : সিলেট জেলার দুর্গাপুর থেকে ডাউকি (তামাবিল) এবং এর পূর্বসীমা পর্যন্ত এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টর। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। হেড কোয়ার্টার ছিল বাঁশতলাতে। ১,০০০ নিয়মিত এবং ৯,০০০ গেরিলা ছিল এ সেক্টরে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক সংগঠনসমূহের অক্লান্ত পরিশ্রম ও জীবনের বিনিময়ে দীর্ঘ ৯ মাসের সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!