মর্যাদার প্রকৃতি তুলে ধর।
অথবা, মর্যাদার প্রকৃতি বা Nature বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানবজীবনে মর্যাদা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রত্যেকেই স্বীয় মর্যাদার ব্যাপারে সচেতন।মানুষ সামাজিক জীব। আর এ মর্যাদা হলো সমাজেরই সৃষ্টি। সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেক মানুষেরই একটা সামাজিক পরিচিতি বা সামাজিক অবস্থান রয়েছে। আর এ সামাজিক পরিচিতি বা অবস্থানই হলো মর্যাদা। যেমন- সমাজে কোন একজন ব্যক্তি কারও পুত্র, কারও স্বামী, কারও বাবা, আবার কারওবা বন্ধু। অপরদিকে, সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বৃত্তিগত বিভিন্নতাও বিদ্যমান। যেমন- কেউ চিকিৎসক, কেউ আইনজীবী, কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী ইত্যাদি। মর্যাদা ব্যক্তির পদবি বা গুরুত্ব অনুসারে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে প্রত্যেক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরই নিজস্ব দায়িত্ব-কর্তব্য ও অধিকারবোধ রয়েছে ।
মর্যাদার প্রকৃতি : মর্যাদা হলো মানবজীবনের অত্যধিক মূল্যবান দিক। এ মর্যাদা সমাজের সৃষ্টি, যা হলো সামাজিক অবস্থানের দ্যোতক। এটি মানুষের সামাজিক পরিচিতির বাহ্যিক নিদর্শন। এর রয়েছে স্বীয় অধিকার ও দায়িত্ব কর্তব্যবোধ। একজন ব্যক্তি একাধিক মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। যেমন- একজন ছাত্র তার শিক্ষকদের কাছে সে ছাত্র, দোকানদারের কাছে খরিদ্দার, বাস চালকের কাছে যাত্রী, বোনের কাছে ভাই, বাবার কাছে পুত্র ইত্যাদি মর্যাদায় অবতীর্ণ। পেশাগত কারণে ব্যক্তির মর্যাদা বিভিন্নরূপ হতে পারে। যেমন- কেউ শিক্ষক, কেউ ডাক্তার, কেউ আইনজীবী ইত্যাদি। পেশাগত অবস্থা ব্যক্তি মানুষের মর্যাদার নির্ধারক হিসেবে প্রতিপন্ন হয়। পদের গুরুত্ব ও পদের সাথে যুক্ত ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও কার্যাবলির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীর মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিধি নির্দিষ্ট নিয়মকানুনের দ্বারা মর্যাদা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। সমাজভেদে বা সামাজিক রীতিনীতিভেদে মর্যাদার বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এর অর্থ হলো একেক সমাজে একেক ধরনের মর্যাদা প্রচলিত আছে, যা অন্য সমাজে নাও থাকতে পারে। সমাজব্যবস্থার পার্থক্যের কারণে মর্যাদা ব্যক্তির ভবিষ্যৎ জীবন গঠনের ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যেমন- সমাজে কোন একটি মর্যাদা প্রচলিত না থাকলে ঐ সমাজের সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি উক্ত মর্যাদার অধিকারী হবে না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনর পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজে ব্যক্তির অবস্থান অনুসারে ব্যক্তির মর্যাদা বা পরিচিতি নিরূপিত হয়ে থাকে। সুতরাং বলা যায় মানুষের সামাজিক মর্যাদা হলো তার সামাজিক অবস্থার দ্যোতক। মানুষ সমাজে বিধিবদ্ধ আইনকানুনের মাধ্যমেও ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং এই ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় মর্যাদা।