General Knowledge

মনই আত্মা’ – চার্বাকদের এ মতবাদ সংক্ষেপে লিখ ।

অথবা, চার্বাকদের মন আত্মবাদ সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, মন আত্মবাদ সম্পর্কে চার্বাকদের মতবাদ লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
চার্বাক দর্শন খুবই প্রাচীন। কঠোপনিষদে নচিকেতা যমকে জিজ্ঞাসা করেন যে, মৃত্যুর পরেও মানুষের কোনরূপ অস্তিত্ব থাকে কি না। তার উত্তরে যম বলেন যে, শিশুর মতো অবোধ ব্যক্তিরাই এবং অহংকারী ব্যক্তিরাই কেবলমাত্র পরলোকের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। যমের প্রত্যুত্তর শুনে এরূপ ধারণা হয় যে, পরলোকের অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা তখন প্রচলিত ছিল। চার্বাকরা পরলোকের অস্তিত্ব অস্বীকার করে।
মন আত্মবাদ বা মনই আত্মা : প্রাণকে আত্মরূপে স্বীকার করা হলে নানা অনুপপত্তি ঘটে। প্রথমত, যে প্রাণ মানুষের আয়ু, যার জন্য মানুষ বেঁচে থাকে, সেই প্রাণ প্রকৃত পক্ষে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস রূপ বায়ুমাত্র; যার কোন চেতনা নেই। কাজেই সচেতন প্রাণ কখনো আমি বা আত্মা হতে পারে না। কারণ যখন কোন ব্যক্তি বলে ‘আমি’, তখন যাকে ‘আমি’ বলে অভিহিত করা যায় তার ইচ্ছা, সংকল্প, অনুভূতি, সুখদুঃখ প্রভৃতি থাকে। তাই কোন কোন চার্বাক মনে করেন, মনই আত্মা। কেননা সুখদুঃখাদি, অনুভব, ইচ্ছাবোধ প্রভৃতি মনেরই ধর্ম। যখন বলা হয়, আমি সুখী, তখন এই আমি মন ছাড়া অন্য কেহ নয়। মনই ইন্দ্রিয়গুলোকে পরিচালিত করে, নিয়ন্ত্রিত করে। মনের অনুপস্থিতিতে কোন ইন্দ্ৰিয়ই নিজ নিজ কাজ করতে পারে না। যেমন কোনকিছু প্রত্যক্ষ করতে হলে মনঃসংযোগ প্রয়োজন। সুতরাং মনই হলো প্রকৃত দ্রষ্টা, শ্রোতা, ঘাতা, রসয়িতা। কাম বা ইচ্ছাই হলো মনের মূলীভূত উপাদান।.প্রাণাত্মবাদিগণ বলেন, প্রাণের ইচ্ছানুসারে দেহ এবং ইন্দ্রিয় চালিত হয়। কিন্তু মন আত্মবাদিগণ বলেন প্রাণ সচেতন
নয়; প্রাণের কোন ইচ্ছা থাকতে পারে না। ব্যক্তি গাঢ় নিদ্রায় অভিভূত হলে তাকে সম্বোধন করা হলে সাড়া মেলে না। এর কারণ নিদ্রাকালে ব্যক্তির দেহের মধ্যে চেতনা থাকে না। প্রাণ সচেতন হলে এরূপ ঘটতো না। কাজেই প্রাণ আত্মা নয়; মনই আত্মা। মন যে আত্মা তার সপক্ষে নানা যুক্তি দেখানো হয়। প্রথমত, মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয় থেকে স্বতন্ত্র বস্তু । দ্বিতীয়ত, মনজড়াত্মক চারটি ভূতের মিলনে দেহে মনের উৎপত্তি। কাজেই ধূর্ত চার্বাকদের দেহাত্মবাদের সঙ্গে এই সম্প্রদায়ের কোন বিরোধ দেখা যায় না। তৃতীয়ত, প্রাণ মনের অধীন বলে প্রাণের ক্রিয়া সম্ভব। চতুর্থত, মনের ইচ্ছানুসারে দেহ ও ইন্দ্রিয়গুলো পরিচালিত হয়। এ মনই দেখে, শুনে ও স্পর্শ করে। এ মনই সজ্ঞান, অজ্ঞান, মেধা ও স্মৃতি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মনকে আত্মা বলে স্বীকার করলে নানা অনুপপত্তি ঘটে। মন অতিরিক্ত কোন সূক্ষ্ম আত্মার অস্তিত্বের ধারণা সুশিক্ষিত চার্বাক সম্প্রদায় স্বীকার করেন নি। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণারঞ্জন শাস্ত্রী মহাশয় বলেন, সুশিক্ষিত চার্বাকরা অধ্যাত্মবাদের দিকে কিছুদূর অগ্রসর হলে ক্রমে ক্রমে ইন্দ্রিয়, প্রাণ ও মনের ও আত্মা স্বীকার করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!