General Knowledge

ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্ত দর্শন”- অভিযোগটি খণ্ডন কর।

অথবা, “ভারতীয় দর্শন কি বিচারবিযুক্ত দর্শন”- আপত্তিটি খণ্ডন কর।
অথবা, “ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্ত দর্শন”— অভিযোগটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের ক্ষেত্রে একটা অভিযোগ করা হয় যে, এ দর্শন বিচারবুদ্ধিকে গ্রহণ করে না। জীবন সম্পর্কে আবেগনির্ভর তত্ত্বগাঁথাই এ দর্শনের আলোচ্যবিষয়। তবে এ অভিযোগটি সঠিক নয়। ভারতীয় দর্শন
জীবঘেঁষা দর্শন ঠিকই, তবে তা অবশ্যই বিচারনির্ভর এবং যুক্তিগ্রাহ্য।
ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্ত দর্শন : সাধারণত বিচারবিযুক্ত দর্শন বলতে বুঝায়, যা মানুষের জ্ঞানের উৎপত্তি, বিকাশ এর প্রকৃতি এবং তার সীমা নিয়ে কোন বিচার না করেই তত্ত্বালোচনা শুরু করে দেয় এবং কতকগুলো মনগড়া সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। এ জাতীয় দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারবুদ্ধির স্মরণাপন্ন না হয়ে কতকগুলো মনগড়া তত্ত্বকে স্বতঃসিদ্ধ বলে গ্রহণ করে নেয়। এক্ষেত্রে অন্ধবিশ্বাসই তাদের একমাত্র হাতিয়ার। যেহেতু অনেক ভারতীয় দার্শনিক ধর্মগ্রন্থ বেদের অস্তিত্ব স্বীকার করে, সেহেতু অভিযোগকারীদের মতে ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্ত দর্শন। এসব অভিযোগকারীরা শুধু যে আস্তিক দার্শনিক সম্প্রদায়কেই বিচারবিযুক্ত দর্শন বলে তা-ই নয়; যারা বেদকে স্বীকার করে না, বেদের প্রামাণ্য ও অভান্ত বলে স্বীকার করে না সে দর্শন সম্প্রদায়গুলোকেও বিচারবিযুক্ত দর্শন বলে অভিযোগ করেছেন। নাস্তিক দর্শন সম্পর্কে তাদের অভিযোগ এই যে, তারা বেদকে বিশ্বাস করে না, তবে তাদের যে ধর্মগুরু রয়েছেন তাদেরকে বিনা বিচারে মহাপুরুষ ও তাদের বাণীকে অভ্রান্ত বলে স্বীকার করে নেয়। যেমন- বৌদ্ধ দর্শন ও জৈন দর্শনে গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীরকে বিনা বিচারে মহাপুরুষ হিসেবে এবং তাঁদের বাণীকে আপ্তবাক্য হিসেবে স্বীকার করেছেন। অতএব ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্ত দর্শন। কিন্তু ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্ত দর্শন এ কথা মেনে নেয়া যায় না। দর্শনের যে তাত্ত্বিক আলোচনা তা মূলত শুরুই হয়েছে ভারতে। জ্ঞানের প্রকৃতি, উৎপত্তি, পরিধি ও এর যথার্থতা নিয়ে আলোচনা করে আসছে ভারতীয় দর্শন সেই শুরু থেকেই। বিশেষ করে চার্বাকরা স্বাধীন মত ও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে জ্ঞানকে গ্রহণ করেছে। গৌতম বুদ্ধ বহু বছর ধ্যান করে গভীর তত্ত্বালোচনার মাধ্যমে জীবন সম্পর্কে অনুধাবন করেছে চারটি আর্যসত্যের মাধ্যমে। তবে একথা সত্য যে, বৌদ্ধধর্মের সমর্থকগণ বৌদ্ধধর্মের ব্যাখ্যার জন্য বুদ্ধদেবের অনুশাসনকেই আপ্তবাক্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তবে তা করেছেন যুক্তির বিবেচনায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শন বিচার বহির্ভূত দর্শন নয়। এ দর্শন জগৎ ও জীবন সম্পর্কে এক গভীর প্রত্যক্ষণের সঠিক ও যুক্তিনিষ্ঠ বহিঃপ্রকাশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!