General Knowledge

ভারতীয় দর্শন নীতি বিমুখতার দর্শন সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, ভারতীয় দর্শন নীতি বিমুখতার দর্শন কি না?
অথবা, ভারতীয় দর্শন কি নীতি বিমুখতার দর্শন?
অথবা, ভারতীয় দর্শন নীতি বিমুখতার দর্শন বলা যায় কি না?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতের প্রাচীন মনীষীগণ আত্মোপলব্ধির ঐকান্তিক মানসে জগৎ সম্বন্ধে যাবতীয় সম্ভাব্য প্রশ্নের সুচিন্তিত মতামত দ্বারা জীবনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাই ভারতীয় সীমারেখার অন্তর্গত সকল মনীষীদের বিশ্ব সম্বন্ধে চিহ্নিত সমস্যাবলির প্রেক্ষিতে তাদের সুচিন্তিত মৌলিক পরমতত্ত্ব সম্বন্ধীয় যে আলোচনা, ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন
তাকে ভারতীয় দর্শন বলে।
ভারতীয় দর্শন নীতি বিমুখতার দর্শন : কোন কোন পাশ্চাত্য দার্শনিকের মতে, ভারতীয় দর্শন নীতি বিমুখতার দর্শন। কারণ ভারতীয় দার্শনিকগণ নৈতিক কর্মসম্পাদনের উপর কোন রকম গুরুত্বারোপ করে নি। তারা
অভিযোগ করেন, ভারতীয় দর্শন মুক্তির দর্শন বলে তার প্রভাবে ভারতীয় দার্শনিক নৈতিক ধর্মে উদাসীন ছিলেন। ফলে জগৎ ও জীবনের প্রতি নৈতিক ও সমাজহিতকর কর্মের প্রতি তারা উদাসীন। তাই অভিযোগকারীরা বলেছেন, ভারতীয় দর্শন নীতি এবং জগৎ বিমুখ।
অভিযোগ খণ্ডন : ভারতীয় বিভিন্ন দার্শনিক সম্প্রদায় বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা করলে ভারতীয় দর্শনের বিরুদ্ধে উপর্যুক্ত অভিযোগের অসারত্ব প্রমাণিত হয়। তবে একথা সত্য যে, ভারতীয় দর্শন আত্মোপলব্ধির দর্শন। তাই সমালোচকরা ভারতীয় দর্শনকে নৈতিক কর্মবিমুখতার এবং জগৎ বিমুখতার দর্শন বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু ভারতীয় দর্শনের আর
একটি দিক লক্ষ্য করলে উক্ত সমালোচকদের অভিযোগ অসার বলে প্রমাণিত হয়। ভারতবর্ষের প্রত্যেক দর্শন নৈতিক কর্মসম্পাদনের উপর জোর দিয়েছেন। সাংখ্য দর্শন যথার্থ জ্ঞানের সাহায্যে জীবের যুক্তির কথা যেমন বলেছেন তেমনি সৎকর্ম সম্পাদনের দ্বারা চিত্তশুদ্ধ ও পবিত্র না হলে যথার্থ জ্ঞানলাভ যে সম্ভব নয় তাও বলেছেন। যোগদর্শনে যোগসাধনার দ্বারা যেমন আত্মার মুক্তির কথা বলা হয়েছে, তেমনি সংযত জীবনযাপন, অসৎ কর্ম বর্জন এবং অসৎ প্রবৃত্তি বিনাশের দ্বারা চিত্ত শুদ্ধ না হলে যোগসাধনা যে সম্ভব নয় এ কথাও বলা হয়েছে। ন্যায় ও বৈশেষিক দর্শনেও বলা হয়েছে, যথাবিহীত কর্মসম্পাদনের দ্বারা মানুষ সুখী হতে পারে; কিন্তু নিষিদ্ধ কর্মসম্পাদন করলে মানুষকে দুঃখ ভোগ করতে হয়। বেদান্ত
দর্শনের মতে, মুক্তিলাভের জন্য ইন্দ্রিয় সংযত রাখা প্রয়োজন। বৌদ্ধ দর্শনেও নির্বাণ লাভের জন্য ‘সম্যক কর্মান্ত’ ও ‘সম্যক আজীবনের’ প্রয়োজনের কথা বলেছেন। সম্যক কর্মান্ত হলো সৎকর্ম এবং সম্যক অজীব বলতে সৎপথ থেকে জীবন নির্বাহ করাকে বুঝিয়েছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতবর্ষের প্রায় সকল দর্শনই মুক্তি লাভের জন্য নৈতিক ও সামাজিক কর্মসম্পাদন এবং নৈতিক জীবনযাপনের উপর গুরুত্বারোপ করেছে। সুতরাং ভারতীয় দর্শনকে কোন মতেই নীতি বিমুখতার দর্শন বলা যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!