ভারতীয় দর্শনে ব্যবহারিক প্রয়োজনবোধ বলতে কী বুঝ?
অথবা, ভারতীয় দর্শনে প্রয়োজনবোধ বলতে কী বুঝ?
অথবা, ভারতীয় দর্শনে ব্যবহারিক প্রয়োজন সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, ভারতীয় দর্শনে প্রয়োজনবোধ সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা পার্থক্য দেখা গেলেও এদের মধ্যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা যেতে পারে। যে বৈশিষ্ট্যগুলো প্রত্যেক ভারতীয় দর্শনেই বিদ্যমান ছিল। এ বৈশিষ্ট্যগুলো ভারতীয় দর্শনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভারতীয় দর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে ব্যবহারিক প্রয়োজনবোেধ অত্যতম।
ভারতীয় দর্শনে ব্যবহারিক প্রয়োজনবোধ : প্রত্যেক ভারতীয় দর্শনের উদ্ভব হয়েছে একটি ব্যবহারিক প্রয়োজন থেকে। ভারতীয় দর্শনসমূহের লক্ষ্য শুধু তত্ত্বালোচনাই নয়, জীবন পরিচালনা করাই ছিল এদের প্রধান উদ্দেশ্য। জীবনকে কিভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করলে জীবনের পরমার্থ লাভ করা যায় তা নির্ণয় করাই ছিল ভারতীয় দর্শনসমূহের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য। ভারতীয় দর্শনের কাজ শুধু তর্কবিতর্কেই শেষ হতো না, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেও তা প্রতিফলিত হতো। দর্শনের সাথে জীবনের এক গভীর সম্বন্ধ ছিল। ভারতবর্ষে কোন দার্শনিক মতবাদে বিশ্বাস করলেই হতো না, সেই মতবাদ অনুযায়ী জীবন নির্বাহ না করলে কখনই তাকে ঐ মতবাদে বিশ্বাসী বলা হতো না। কিন্তু এ ধরনের একটি ব্যবহারিক উদ্দেশ্য থাকলেও ভারতীয় দর্শনসমূহ শুধু নীতিবিজ্ঞান বা ধর্মের আলোচনাই করে নি। ভারতীয় দর্শন অধিবিদ্যা, জ্ঞানবিদ্যা, তত্ত্ববিদ্যা প্রভৃতিরও পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেছে। এ দর্শন একই দেশে ও একই সামাজিক পরিবেশে উদ্ভূত ও পুষ্ট হয়েছে। এরা একই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বাহক।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শনের প্রকৃতি ব্যবহারিক ও অন্তর্মুখী। এ দর্শনের প্রকৃতি তাকে অন্যান্য দর্শন থেকে পৃথক করে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে। ভারতীয় দার্শনিকগণ শুধু জ্ঞানের পিপাসা নিবারণের জন্য দর্শন চর্চা করেন নি, বরং মানুষের ব্যবহারিক জীবনের চাহিদা পূরণ, আত্মার মুক্তি, আধ্যাত্মিক প্রশান্তির সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন এবং মানব কল্যাণ সাধন ছিল তাদের উদ্দেশ্য।