General Knowledge

ভারতীয় দর্শনে ধ্যান ও নৈতিক শুচিতা বলতে কী বুঝ?

অথবা, ভারতীয় দর্শনে ধ্যান ও আত্মসংযম বলতে কী বুঝ?
অথবা, ভারতীয় দর্শনে ধ্যান ও নৈতিক শুচিতা কী?
অথবা, ভারতীয় দর্শনে ধ্যান ও আত্মসংযম কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
সব ভারতীয় দর্শনই বিশ্বকে এক নৈতিক রঙ্গমঞ্চরূপে এবং বিভিন্ন জীবকে অভিনেতা ও অভিনেত্রীরূপে কল্পনা করেছে। অভিনেতা যেমন তার যোগ্যতা অনুসারে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করে এবং অভিনয়ের ফল অনুসারে প্রশংসা বা নিন্দার ভাগী হয়, তেমনি জীবগণও তাদের পূর্বজন্মের কর্মফল অনুসারে মানবদেহ ধারণ করে এবং কর্ম অনুসারে সুখদুঃখের ভাগী হয়।
ভারতীয় দর্শনে ধ্যান ও নৈতিক শুচিতা : সব ভারতীয় দর্শনই সম্যক জ্ঞানের জন্য ধ্যান এবং নৈতিক শুচিতা বা আত্মসংযমের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে। তত্ত্বালোচনার জন্য যে সত্য আবিষ্কৃত হয় তাকে জীবনের মধ্যে উপলব্ধি করার জন্য, জীবনের সাথে যুক্ত করার জন্য সত্যকে ধ্যান করার প্রয়োজন। যা সত্য তা অহরহ ধ্যান করলে অবিদ্যা দূরীভূত হবে। ধ্যানের জন্য নৈতিক শুচিতা বা আত্মসংযম অপরিহার্য। মন যদি বিক্ষিপ্ত থাকে, মন যদি সংযুত না হয়, সর্বদাই বিষয়ের দিকে ধাবিত হয়, তবে সে রকম মন নিয়ে ধ্যান করা বা সত্যকে একাগ্রভাবে চিন্তা করা অসম্ভব। কাজেই সর্বপ্রথমে চিত্তশুদ্ধি করতে হবে। চিত্তশুদ্ধি না ঘটলে অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের প্রতি চিত্তের আসক্তি দূর না হলে সত্যের প্রতি চিত্ত নিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। ফলে সত্য জ্ঞানলাভ অসম্ভব হয়। তাই সমস্ত ভারতীয় দর্শনেই সত্য জিজ্ঞাসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- প্রাথমিক শর্ত হিসেবে চিত্তশুদ্ধি অবশ্য কর্তব্য বলা হয়েছে। চিত্তশুদ্ধি বা আত্মসংযত বলতে ইন্দ্রিয়কে উচ্ছেদ করা বুঝায় না। ইন্দ্রিয়গুলোকে স্ব-স্ব স্থানে প্রধান না রেখে বুদ্ধির অধীনে আনয়ন করা বুঝায়। সুতরাং ভারতীয় দর্শন কৃচ্ছতাবাদের দর্শন নয়, ভারতীয় দর্শন আত্মোপলব্ধির দর্শন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চার্বাক ব্যতীত প্রায় সব ভারতীয় দর্শনের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, দার্শনিকগণ বাহ্যজগতের প্রতি যতটা আকৃষ্ট হয়েছেন তার চেয়ে বেশি আকৃষ্ট হয়েছেন মানুষের অন্তরসত্তার প্রতি। সুতরাং ভারতীয় সব দর্শন নৈতিক আত্মসংযমের কথা স্বীকার করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!