General Knowledge

ভারতীয় দর্শনের বিষয়বস্তু লিখ।

অথবা, ভারতীয় দর্শনের পরিধি সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, ভারতীয় দর্শনের পরিসর লিখ।
অথবা, ভারতীয় দর্শন কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা করে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
জগৎ ও জীবনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে ভারতীয় মনীষিগণ যেসব তত্ত্ব ও মতবাদ প্রদান করেছেন তার সমষ্টিই ভারতীয় দর্শন। এজন্যই ভারতীয় দর্শনের পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত। জগৎ ও জীবনের এমন কোন দিক নেই, যা নিয়ে ভারতীয় দর্শন আলোচনা করে
ভারতীয় দর্শনের পরিধি বা বিষয়বস্তু : ভারতীয় দর্শনের পরিধি বা বিষয়বস্তু নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. জ্ঞানতত্ত্ব : জ্ঞানতত্ত্ব ভারতীয় দর্শনের পরিধির আওতাভুক্ত। ভারতীয় সকল সম্প্রদায়ই তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। চার্বাক দর্শন তাদের জ্ঞানতাত্ত্বিক আলোচনায় প্রত্যক্ষণকে এবং জৈন দার্শনিকগণ প্রত্যক্ষণ, অনুমান ও শব্দকে জ্ঞানের উৎস বলে স্বীকার করেছেন।
২. নীতিতত্ত্ব : ভারতীয় দর্শনের প্রায় প্রতিটি সম্প্রদায় নীতিতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নীতিতত্ত্ব ভারতীয় দর্শনের পরিধিভুক্ত।
৩. ধর্মতত্ত্ব : ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সমগ্র ভারতীয় দর্শন আস্তিক ও নাস্তিক এ দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বেদে বিশ্বাসী দার্শনিক সম্প্রদায় আস্তিক এবং অবিশ্বাসী দার্শনিক সম্প্রদায় নাস্তিক সম্প্রদায় নামে অভিহিত।
৪. ঈশ্বরতত্ত্ব : ঈশ্বরতত্ত্ব সম্পর্কীয় আলোচনা ভারতীয় দর্শনের পরিধিভুক্ত। ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে ভারতীয় দর্শন ঈশ্বরবাদী বা আস্তিক ও নিরীশ্বরবাদী বা নাস্তিক এ দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
৫. আত্মাতত্ত্ব : ভারতীয় সকল দার্শনিক সম্প্রদায়ই আত্মা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। কোন সম্প্রদায় আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেছে, আবার কোন সম্প্রদায় আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে।
৬. জগৎ তত্ত্ব : জগৎ সম্পর্কীয় আলোচনা ভারতীয় দর্শনের পরিধিভুক্ত। জগতের উৎপত্তি ব্যাখ্যায় চার্বাক দার্শনিকগণ বলেন, ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ এ চারিভূত নিজেদের স্বাভাবিক ধর্ম ও ক্রিয়া অনুসারে এ জগৎ সৃষ্টি করেছে।
৭. মোক্ষ বা মুক্তি : চার্বাক দার্শনিকগণ মুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, যেহেতু দেহাতিরিক্ত আত্মার কোন ভিন্ন সত্তা নেই, সেহেতু আত্মার মুক্তি অবান্তর প্রশ্নমাত্র। জৈনগণের মতে, সম্যক জ্ঞান, সম্যক দর্শন ও সম্যক সমাধি আত্মার মোক্ষ লাভের পথ।
৮. কর্মবাদ : কর্মবাদ অনুসারে যে যেমন কর্ম করবে সে তেমন ফল ভোগ করবে। কেননা কর্মের নৈতিক মূল্য সংরক্ষিত থাকে।
৯. জন্মান্তরবাদ : ভারতীয় দর্শনে জন্মান্তরবাদ কর্মবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। জন্মান্তরবাদের মূলকথা হলো পুনর্জন্ম।
১০. বেদ : বেদকে কেন্দ্র করে ভারতীয় দর্শনের উদ্ভব ও বিকাশ। ভারতীয় দর্শনের প্রতিটি সম্প্রদায়ই বেদ নিয়ে আলোচনা করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শনের পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত। জগৎ ও জীবনের বিভিন্ন ও বহুমুখী সমস্যা সমাধানকল্পে ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়সমূহ তাদের যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনা উপস্থাপন করেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এক বিশাল জ্ঞান ভাণ্ডারের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!