ভারতীয় দর্শনকে কি হিন্দু দর্শন বলা যায়?
অথবা, ভারতীয় দর্শন কি হিন্দু দর্শন?
অথবা, ভারতীয় দর্শন কি হিন্দু দর্শন? আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : কোন কোন চিন্তাবিদ ভারতীয় দর্শনকে হিন্দু দর্শন নামে অভিহিত করেন। তাদের মতে ভারতীয় দর্শনের আস্তিক ও নাস্তিক সকল দার্শনিক সম্প্রদায়ের উৎপত্তিস্থল হলো বেদ। বেদ যেহেতু হিন্দু ধর্মের একটি মৌলিক ভিত্তি, সেহেতু ভারতীয় দর্শনকে অতি সহজেই হিন্দু দর্শন বলা যায়। কিন্তু চূড়ান্ত বিশ্লেষণে এ অভিধা ধোপে টিকে নি।
ভারতীয় দর্শন হিন্দু দর্শন : নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, ভারতীয় দর্শনের স্বরূপ সম্পর্কিত এক বিভ্রান্তির উপর তাদের এ মত প্রতিষ্ঠিত। কট্টরপন্থীরা হিন্দু ও ভারতীয় এ দুই শব্দকে এক ও অভিন্ন করে
দেখেন। তারা ভারতীয় বলতে কোনরূপ বিচার বিশ্লেষণ না করেই ‘হিন্দু’ জাতি মনে করে থাকেন। তাই তারা ভারতীয় দর্শনকে হিন্দু দর্শন বলে মনে করেন। অর্থাৎ হিন্দু শব্দটি একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ঘোষণা করে। কিন্তু ভারতীয় শব্দটি একটি দেশের পুরো ব্যক্তিসত্তাকে প্রকাশ করে। কিন্তু ভারতে বহু ধর্ম সমর্থনকারীরা বাস করে। ধর্মের ভিত্তি হিসেবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন ভিন্ন। আর এ দৃষ্টিভঙ্গিকে কেন্দ্র করেই হিন্দু, অহিন্দু, আস্তিক, নাস্তিক, বৈদিক, অবৈদিক, জৈন, সাংখ্য, বৌদ্ধ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেছে। ধর্মের এ বিভিন্নতার মধ্যেও জাতীয়তাবাদের দিক দিয়ে তাদের মধ্যে ঐক্য পরিলক্ষিত হয়। সকল ভারতীয় সম্প্রদায়ই ভারতীয় জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ। আর তাদের দার্শনিক চিন্তা চেতনায়ও এ ঐক্যের ছাপ সুস্পষ্ট।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শন একটি নিরপেক্ষ চিন্তাধারা। এখানে কেবল হিন্দু সম্প্রদায়ের বৈদিক ক্রিয়াকলাপই স্থান পায় নি। কট্টর বেদবিরোধী চার্বাকের মতো জৈন ও বৌদ্ধ প্রভৃতি দর্শনের আলোচনাও তাতে আলোচিত হয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় দর্শন কোন বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দর্শন নয়, এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন
চিন্তাধারা স্থান পেয়েছে। ভারতীয় দর্শন তার স্বরূপগত কারণেই উদার দৃষ্টিভঙ্গির পূজারী। তাই ভারতীয় দর্শনকে কোনভাবেই হিন্দু দর্শন বলা চলে না।