ভাগ কর শাসন কর নীতি ও এর ফলাফল কী?
অথবা, ভাগ কর শাসন কর নীতি কী?
অথবা, ব্রিটিশদের “ভাগ কর ও শাসন কর নীতি” সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : ব্রিটিশরা ভারতকে প্রায় দীর্ঘ ১৯০ বছর শাসন করে। শুধু শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ভারতের মতো সুবিশাল সাম্রাজ্যকে সুদীর্ঘকাল শাসন করা সম্ভব ছিল না, এর পিছনে ব্রিটিশদের কিছু উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও কার্যকরী পদক্ষেপ ছিল ‘ভাগ কর, শাসন কর’ নীতি।
ভাগ কর শাসন কর নীতি : এর মূলকথা হলো ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি নির্বিশেষে জনগণের মধ্যে জাতিগত ঐক্যের বদলে সাম্প্রদায়িক ঐক্য সৃষ্টি করে একে অন্যের বিরোধিতা করা। ভারতে ২টি প্রধান সম্প্রদায় ছিল হিন্দু ও মুসলিম। সুচতুর ব্রিটিশরা প্রথম থেকেই বুঝতে পারে যে এ দুটি সম্প্রদায় এক হয়ে থাকলে পরবর্তীতে তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে, তাই তারা অত্যন্ত চাটুকারিতার সাথে এ দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষিতে তাদের ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতি প্রয়োগ করে। এ ভাগ কর শাসন কর নীতি প্রয়োগ করার সুবিধার্থে ব্রিটিশরা কখনো মুসলমান আবার কখনো হিন্দুদের পক্ষ নেয় এবং দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ, ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ, ১৯০৯ সালে মর্লে মিন্টো আইন এই ভাগ কর শাসন কর নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। এ ভাগ কর শাসন কর নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্রিটিশরা বরাবরই সফলতা পায়। এ ভাগ কর শাসন কর নীতির ফলাফল নিম্নরূপ :
১. মুসলমান ও হিন্দুদের সম্পর্কের চরম অবনতি এবং দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন সময়ের দাঙ্গা।
২. ভারতের দুটি প্রধান শক্তি একে অপরের বিরোধী থাকায় ব্রিটিশ সরকার দীর্ঘদিন ভারত শাসনের সুবিধা ভোগ করে।
৩. এ নীতির প্রয়োগের ফলে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী গড়ে উঠতে পারেনি।
৪. ভাগ কর শাসন কর নীতি প্রয়োগের ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক চেতনার উদ্ভব হয় এর সুদূরপ্রসারী ফল হলো ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বিশাল ভারতকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দীর্ঘকাল শাসন করার পিছনে ব্রিটিশ সরকারের সবচেয়ে কার্যকরী এবং গুরুত্বপূর্ণ শাসন পদ্ধতি হলো ‘ভাগ কর শাসন কর নীতি’। এ পদ্ধতির ফলে ভারতে দুটি প্রধান শক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে লেগে থাকে এবং ব্রিটিশ সরকারের পথ সুগম করতে থাকে। এ পদ্ধতির ফলে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে যে তিক্ততার সৃষ্টি হয় এর সুদূরপ্রসারী ফল হলো ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ ।