বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ কী?
অথবা, নির্বাণ প্রসংগে গৌতম বুদ্ধের অষ্টাঙ্গিক মার্গ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বৌদ্ধ অষ্টাঙ্গিক মার্গ সম্পর্কে যা জান লিখ।
অথবা, নির্বাণ লাভ বা দুঃখ নিরোধের আটটি উপায় কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : গৌতম বুদ্ধের (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দ খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দ) বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সে মতবাদই ‘বৌদ্ধ দর্শন’ বা ‘বৌদ্ধধর্ম।’ নির্বাণ বৌদ্ধ দর্শনের প্রাণ স্বরূপ। বৌদ্ধ দর্শনে দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তি বা দুঃখ থেকে চির মুক্তি লাভকেই নির্বাণ বলা হয়েছে। নিম্নে প্রশ্নপত্রের আলোকে আলোচনা করা হলো- অষ্টাঙ্গিক মার্গ বুদ্ধদেবের মতে, দুঃখের কারণ অপসারণ করার মার্গ বা পথই হলো দুঃখ নিবৃত্তির পথ। এ পথের আটটি অঙ্গ বা স্তর আছে। তাই এ পথকে বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়। অর্থাৎ যে পথ অনুসরণ করে দুঃখ থেকে চিরমুক্তি লাভ করা যেতে পারে, সে পথকে বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলে অভিহিত করা হয়েছে। বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গগুলো হলো :
১. সম্যক দৃষ্টি : চারটি আর্য সত্যের যথার্থ জ্ঞানই হলো সম্যক দৃষ্টি। অবিদ্যা থেকেই জগৎ ও জীবন সম্পর্কে মিথ্যা জ্ঞানের উদ্ভব।
২. সম্যক সংকল্প : পার্থিব বিষয়বস্তুর প্রতি অনাসক্তি, ভোগ বাসনা জয় করার ইচ্ছা এবং দ্বেষ ও রাগ বিসর্জন দেওয়াই সম্যক সংকল্প।
৩. সম্যক ব্যায়াম : সম্যক ব্যায়াম বলতে বুঝায় কুচিন্তার বিনাশ সাধন করা, কুচিন্তার উৎপত্তি নিবারণ করা, সৎচিন্তার সংরক্ষণ ও সংবর্ধন করা এবং সৎচিন্তা উৎপাদনের জন্য সচেষ্ট হওয়া।
৪. সম্যক কর্মান্ত : সম্যক কর্মান্ত বলতে বুঝায় প্রাণ হত্যা, চৌর্য ও ইন্দ্রিয় সেবা থেকে বিরত হওয়া।
৫. সম্যক আজীব : সদুপায়ে জীবনযাত্রা নির্বাহ করাই হলো সম্যক আজীব। বুদ্ধদেব বলেছেন, মুক্তিকামীকে জীবিকা অর্জনের জন্য অসৎ উপায় বর্জন করতে হবে। মিথ্যা ভাষণ ও অন্যায় আচরণ বর্জন করে সদুপায়ে জীবিকা নির্বাহ করাই হলো মুক্তিকামীর কর্তব্য।
৬. সম্যক ব্যায়াম : মনে দৃঢ়মূল কুচিন্তার বিনাশ সাধন, নতুনভাবে মনে কুচিন্তার উৎপত্তি নিবারণ, মনে সৎ চিন্তা আনয়ন এবং সৎ চিন্তাকে মনে সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টাকে সম্যক ব্যায়াম বলা হয়।
৭. সম্যক স্মৃতি : জগৎ, শরীর, মন ও ইন্দ্রিয়াদি সবই অনিত্য, জীবন ক্ষণস্থায়ী প্রভৃতি তত্ত্বকথা সবসময় স্মরণে রাখাই ‘সম্যক স্মৃতি’।
৮. সম্যক সমাধি : মনঃসংযোগের নামই সম্যক সমাধি। যে ব্যক্তি পূর্বোক্ত সাতটি নীতির অধিকারী হয়েছেন তিনিই সম্যক সমাধির মাধ্যমে নির্বাণ লাভ করতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অষ্টাঙ্গিক মার্গের তিনটি প্রধান অঙ্গ হলো শীল বা সাধু চরিত্র, ধ্যান বা সমাধি এবং প্রজ্ঞা বা তত্ত্বজ্ঞান । জ্ঞানালোকে যাঁর চরিত্র গঠিত, তিনি যদি ধ্যানমগ্ন হন, তবে বিশ্বরহস্য তাঁর কাছে উদ্ঘাটিত হবেই এবং তিনি মুক্ত হবেন।