General Knowledge

বৌদ্ধ দর্শনে অনাত্মবাদ বলতে কী বুঝ?

অথবা, বৌদ্ধ দর্শনে নৈরাত্মবাদ বলতে কী বুঝ?
অথবা, বৌদ্ধ দর্শনে আত্মার ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বৌদ্ধ অনাত্মবাদ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
গৌতম বুদ্ধের (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দ) বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠে সে মতবাদকে ‘বৌদ্ধ দৰ্শন’ বা ‘বৌদ্ধ ধর্ম’ বলে। গৌতম বুদ্ধের নৈতিক শিক্ষার মূলে চারটি দার্শনিক তত্ত্ব রয়েছে। এ চারটি তত্ত্ব হলো প্রতীত্যসমুৎপাদ বা শর্তাধীন সৃষ্টিবাদ, কর্মবাদ, সর্বব্যাপক পরিবর্তনবাদ বা অনিত্যবাদ এবং অনাত্মবাদ। নিম্নে প্রশ্নপত্রের আলোকে বৌদ্ধ দর্শনের অনাত্মবাদ বা নৈরাত্ম্যবাদ আলোচনা করা হলো :
১. বৌদ্ধ দর্শনে অনাত্মবাদ বা নৈরাত্ম্যবাদ : বৌদ্ধ দর্শনের অনাত্মবাদ সম্পর্কে নিম্নলিখিত আলোচনা করা যায় :
চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব নেই : বুদ্ধদেব মানুষের মধ্যে শাশ্বত বা চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। তাঁর মতে, জগতে সবকিছুই যখন অনিত্য তখন চিরন্তন আত্মার অস্তিত্ব থাকাও সম্ভব নয়। অথচ সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, মানুষের আত্মা নিত্য ও চিরন্তন এবং দেহের নানাবিধ পরিবর্তনের মধ্যেও আত্মা অপরিবর্তিত থাকে। দেহের বিনাস আছে, কিন্তু আত্মার বিনাশ নেই। এ আত্মাই মানুষের অনুভূতি, চিন্তা ও ইচ্ছার আঁধারস্বরূপ। কিন্তু বুদ্ধদেবের মতে, আত্মা বলে এরূপ কোন নিত্য বস্তু নেই।
২. আত্মা দেহ মনের সংঘাত : বুদ্ধদেবের মতে, সাধারণ লোক যাকে আত্মা বলে মনে করে তা আসলে পাঁচটি উপাদানের সংঘাত। উপাদানগুলো হচ্ছেঃ ১। রূপ বা দেহ, ২। বেদনা, ৩। সংজ্ঞা বা প্রত্যক্ষ, ৪। সংস্কার এবং ৫। বিজ্ঞান বা চৈতন্যের সমাহার। এদের মধ্যে একমাত্র রূপ বা দেহই বাহ্যিক আর বাকিগুলো মানসিক। সেজন্য বুদ্ধদেব বলেন যে, আত্মা হচ্ছে দেহ মনের সংঘাত। বুদ্ধদেবের এ মতের নামই অনাত্মবাদ।
৩. মানসিক প্রক্রিয়ার ধারা বা প্রবাহই আত্মা : বুদ্ধদেবের মতে, কোন এক মুহূর্তে আমাদের মধ্যে আমরা যেসব মানসিক প্রক্রিয়াগুলো দেখি সে মানসিক প্রক্রিয়াগুলোর ধারা বা প্রবাহই আত্মা। আমাদের মধ্যে চিন্তা, ইচ্ছা, সুখ-দুঃখপ্রভৃতি অনবরত আসা যাওয়া করছে। চেতনার এ অবিরাম প্রবাহই হলো আত্মা। এ প্রবাহের অন্তরালে কোন শাশ্বত বা
চিরন্তন সত্তার অস্তিত্ব নেই।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বুদ্ধদেবের অনাত্মবাদের সঙ্গে তাঁর প্রতীত্যসমুৎপাদ ও অনিত্যবাদ বা ক্ষণিকত্ববাদের সংগতি রয়েছে। এ অনাত্মবাদের উপর তিনি খুবই গুরুত্বারোপ করেছেন এবং শিষ্যদের বলেছেন সবাই আত্মা সম্পর্কে ভ্রমাত্মক ধারণা পরিত্যাগ করে। কারণ আত্মা সম্পর্কে ভ্রমাত্মক ধারণাই বুদ্ধদেবের মতে দুঃখ সৃষ্টি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!