অথবা, বৌদ্ধ দর্শনে ঈশ্বরের স্থান নির্ণয় কর।
অথবা, বৌদ্ধ ঈশ্বরতত্ত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বুদ্ধদেবই কি বৌদ্ধধর্মের ঈশ্বর?
উত্তর৷ ভূমিকা : গৌতম বুদ্ধের বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সে মতবাদই ‘বৌদ্ধ দর্শন’ বা ‘বৌদ্ধধর্ম।’ বুদ্ধদেবের মৃত্যুর পর বৌদ্ধধর্মের আদর্শ ও রীতিনীতি নিয়ে বুদ্ধদেবের শিষ্যবর্গের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। প্রাচীন পন্থি গোঁড়া বৌদ্ধগণ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পালনীয় আচারব্যবহারের কঠোরতা
শিথিল করার পক্ষপাতী ছিলেন না এবং যেসব ভিক্ষু এ মতের বিরোধিতা করলেন তাদের সঙ্গ হতে বের করে দিলেন। বহিষ্কৃত ভিক্ষুগণ সম্মিলিত হয়ে ‘মহাসঙ্গিক’ নামে একটি সম্প্রদায় গঠন করলেন। এ সম্প্রদায় কালক্রমে ‘মহাযান’ সম্প্রদায় নামে পরিচিত হয়। আর গোঁড়া প্রাচীনপন্থিদের যে সম্প্রদায় তা ‘হীনযান’ নামে পরিচিত হয়। মহাযান সম্প্রদায়ই বুদ্ধদেবকে ঈশ্বর বলে ব্যাখ্যা করেন।
বুদ্ধদেবই ঈশ্বর (Buddha is God) : হীনযান ধর্ম সম্প্রদায়ের ঈশ্বরবিহীন আত্মনির্ভরতার ধর্ম সাধারণ লোকের মনকে জয় করতে পারে না। সাধারণ মানুষ খুবই দুর্বল, আপদ-বিপদে আত্মরক্ষায় যখন সে ব্যর্থ হয়, তখন সে নিজেকে খুব অসহায় মনে করে। এ অসহায় অবস্থায় সে চায় এক প্রেমময় পুরুষের দয়া ও আশ্রয়, যার কাছে সে কেঁদে বলতে পারে, ‘প্রভু তুমি আমার সব অপরাধ ক্ষমা কর’। এ প্রেমময় পুরুষই ঈশ্বর। সাধারণ মানুষ এমন ধর্ম চায়, যে ধর্মে ক্ষমাসিন্ধু করুণাময়, পতিতপাবন ঈশ্বরের স্বীকৃতি আছে। মহাযান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুরা এ নিগুঢ় সত্য উপলব্ধি করেন এবং সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মিটাতে সচেষ্ট হন। তাই তাঁরা বলেছেন, এ বুদ্ধদেবই ঈশ্বর। তিনিই পাপী-তাপীর ত্রাণবার্তা। এ কথার সমর্থনে মহাযানপন্থিরা আরো বলেন, এক পরম সত্তা আছেন, যিনি বেদান্তের নির্গুণ ব্রহ্মের মত অতিন্দ্রীয় এবং বর্ণনাতীত এবং ধর্মকায়রূপে জগতে আত্মপ্রকাশ করে জগতকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং বিশ্বের মানুষকে দুঃখ হতে পরিত্রাণ লাভে সহায়তা করেন। বুদ্ধদেব সে পরম সত্তারই প্রকাশ। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মহাযানপন্থিরা ধর্মকায়রূপে বুদ্ধদেবকে ঈশ্বর বা ভগবানের আসনে উপবিষ্ট করে সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করেছেন। মহাযানপন্থীদের মতে বুদ্ধদেব ঈশ্বরের স্থলাভিষিক্ত, সাধারণ মানুষ ঈশ্বরের পূজার মতো বুদ্ধদেবেরও পূজা-অর্চনা করতে পারে এবং তাঁর করুণা ও সাহায্যপ্রার্থী হতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় মহাযানপন্থীরা বুদ্ধদেবকে ঈশ্বরের আসনে প্রতিষ্ঠিত করে বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধ দর্শনকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করেছেন। তাইতো ‘বুদ্ধদেবই ঈশ্বর’ কথাটির গভীর তাৎপর্য লক্ষ্য করা যায়।

ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079