অথবা, বিশ্বায়নের ফলাফল বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বর্তমান যুগকে চিহ্নিত করা মানব ইতিহাসের চতুর্থ যোগাযোগ বিপ্লবের যুগ হিসেবে। এ যুগের তথ্য প্রযুক্তিগত উন্নতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এনে দিয়েছে বিশ্বায়ন নামক প্রক্রিয়াটির। বিশ্বের প্রতিটি অংশের সাথে অন্যান্য অংশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরস্পর আন্তঃনির্ভরতা হচ্ছে বিশ্বায়নের মূলকথা।
বিশ্বায়নের ফলাফল (Consequences of Globalization) : বিশ্বায়ন ধারণা বর্তমানে বহুল প্রচলিত ধারণা। বিশ্বায়নের প্রভাব বর্তমানে পড়েছে গোটা বিশ্বের শাসনব্যবস্থায়। নিম্নে বিশ্বায়নের ফলাফল ব্যাখ্যা করা হলো :
১. মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকাশ (Expansion of open market economy) : বিশ্বায়নের ধারণার সাথে মুক্তবাজার অর্থনীতির সম্পর্ক অনেকটা সুদূরপ্রসারী । মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে সারাবিশ্বের বাজার ব্যবস্থা এখন সকলের কাছে উন্মুক্ত হয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় যার পণ্যের মান ভালো সে টিকে থাকছে আর অন্যরা ছিটকে পড়ছে। আর বিশ্বের বাজার অর্থনীতির এ অবস্থার জন্য লক্ষণীয় বিষয় হলো বিশ্বায়ন ।
২. সাম্রাজ্যবাদীদের শক্তি বৃদ্ধি (Increase in strength of imperialists) : বিশ্বায়নের কারণে বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব এখন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে। তারা গোটা বিশ্বকে নিজের আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয়েছে। তারা নিজ স্বার্থে অসাধ্যকেও জয় করতে তোয়াক্কা করছেন না। তবে এর ফলে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন বিপরীতমুখী হতে যাচ্ছে। কারণ
বিশ্ব এখন সাম্রাজ্যবাদীদের হাতের মুঠোয়। তারা নিজ স্বার্থে প্রয়োজনমত তা ব্যবহার করছে।
৩. শিল্প ক্ষেত্রে পরিবর্তন (Change of industrial sector) : বিশ্বায়নের বর্তমান অবস্থা লগ্নের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া আর কয়েক দশক আগের শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার দিকে লক্ষ্য করলে বিশ্বায়ন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বের শিল্পক্ষেত্রে অবাধ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যার শিল্প যত উন্নত সে তত উন্নতি সাধন করতে পারছে, অন্যরা ছিটকে পড়ে যাচ্ছে।
৪. কৃষিক্ষেত্রে পরিবর্তন (Change of agricultural sector) : বিশ্বায়নের ফলে শিল্পক্ষেত্র ছাড়া কৃষিক্ষেত্রেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ সারাবিশ্বের কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি এখন সকলের নাগালের কাছে। তবে এক্ষেত্রে ধনতান্ত্রিক দেশগুলো তুলনামূলক বেশিদূর অগ্রসর হচ্ছে।
৫. উন্নত দেশগুলোর অবস্থা (Condition of development countries) : বিশ্বায়নের ফলে সারাবিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন বিজয়ের আলোকবর্তিকা অতি সহজে ঘরে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। তারা সারাবিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় এমনিতে স্থান দখল করছে। কারণ বিশ্বায়নের স্রষ্টা তো তারাই। তাহলে সুবিধা যে তারা বেশি পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে, বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের উন্নয়নমুখী দেশগুলো অবাধ প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পিছনে পড়ে যাচ্ছে।
৬. বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি (Development of world communication system) : বিশ্বায়নের ফলে বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আমরা এখন তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা যা দুরতিক্রম্য ছিল তা প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারছি। ফলে সে ক্ষেত্রে অতীতের যোগাযোগ ব্যবস্থার চেয়ে বর্তমান একবিংশ শতকের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ক্ষেত্রে মিল অনেকাংশে খুঁজে পাওয়া যায় না।
৭. তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি (Development of technological information) : তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের বিরাট প্রভাব রয়েছে। কারণ অবাধ তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের ফলে যে দেশ যত প্রযুক্তির দিকে অগ্রগামী তারা তত উন্নয়ন করতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে এতে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পিছনে পড়ে থাকছে উন্নয়নশীল দেশগুলো।
৮. সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি (Increase of terrorists activities) : বিশ্বায়নের ফলে যদিও অনেকটা সুবিধা হয়েছে তবে বিরূপ প্রভাব যে পড়ে নি তা নয়। তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের ফলে এখন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাত্রাও বেড়ে গেছে। ফলে গোটা বিশ্ব সন্ত্রাসের মোকাবিলার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে।
৯. সাম্যবাদীদের আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি (Increase of movemental limit of communist) : বিশ্বায়ন একবিংশ শতাব্দীর জন্য আশীর্বাদ হলেও বিশ
্বের সাম্যবাদীদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই বিশ্বের সাম্যবাদী মানুষগুলো বিশ্বায়নের ধারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছে। কিন্তু তারা এ সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসী নীতির সাথে তেমন তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বায়ন হলো বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের যুগের একটি প্রচলিত ও গ্রহণযোগ্য ধারণা। বিশ্বায়নের সুবিধা প্রয়োগ করে উন্নত দেশগুলো নিজেদের অবস্থানকে আরো শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে বিশ্বায়নের এ সুফল থেকে উন্নয়নশীল দেশের শান্তিকামী মানুষ তেমন উপকৃত হতে পারছে না। কারণ তাদের পুঁজি খুব কম এবং উৎপাদিত পণ্য মানগত দিক থেকে অনুন্নত। তবে তুলনামূলক বিচারে বিশ্বায়ন আধুনিক সমাজে গ্রহণযোগ্য।