বিভিন্ন প্রকার পরিবারের সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।
অথবা, পরিবারের প্রকারভেদসমূহের বিবরণ দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : অতীতের মানুষেরা হিংস্র জীবজন্তু থেকে আত্মরক্ষা তথা জীবনধারণ এবং আহার্য সংগ্রহ করার অভিপ্রায়ে নিজস্ব প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ জীবন গড়ে তোলে। মানুষের এ দলবদ্ধ জীবনের প্রাচীনতম রূপটি পরিবার বা Family. বিবাহ হচ্ছে পরিবারের ভিত্তি। আর স্বামী এবং স্ত্রীর বিবাহ বন্ধন দ্বারাই পরিবারের সৃষ্টি। তাই বলা যায়, পরিবার হচ্ছে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোকের বৈধভাবে বসবাস করার একটি সংগঠন, যেখানে সন্তান উৎপাদন ও প্রতিপালনের অধিকার আইনসংগত।
পরিবারের প্রকারভেদ : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানী ঠিক একইভাবে কতিপয় নিয়মকানুন অনুসরণ করে পরিবারকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। নিম্নে পরিবারের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো :
বিবাহের প্রকৃতি অনুসারে : বিবাহের প্রকৃতি অনুসারে পরিবারকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায় :
১. একবিবাহ পরিবার (Monogamy family) : পরিবারের আধুনিক ও সর্বজনীন রূপ একবিবাহ পরিবার, যা পৃথিবীর প্রায় সকল সমাজেই ব্যাপক হারে লক্ষণীয়। নৃবিজ্ঞানী G.P.Murdock তাঁর ১৯৪৯ সালের গবেষণায় ২৩৮টি সমাজের মধ্যে ৪৩টিতে ১৮% এবং ১৯৫৭ সালের গবেষণায় ৫৫৪৯ সমাজের মধ্যে ১৩৫ থেকে (২৪%) একবিবাহ
পরিবারের অস্তিত্ব খুঁজে পান। মূলত অর্থনৈতিক অবস্থা ব্যক্তিকে একাধিক স্বামী বা স্ত্রী গ্রহণে বাধার সৃষ্টি করায় একজন স্বামী ও একজন স্ত্রীবিশিষ্ট Monogamian family সমাজে বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
ক. বহুস্ত্রী পরিবার (Polygyny family) : একজন পুরুষ একাধিক মহিলাকে বিবাহের মাধ্যমে বহুস্ত্রী পরিবার গড়ে তোলে । বাংলাদেশের মতো কৃষিভিত্তিক সমাজে এ ধরনের পরিবারের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। Murdock ১৮৪৯ সালের গবেষণায় ১৯৩টি (৮১%) এবং ১৯৫৭ সালে ৪১৫টি (৭৫%) সমাজে বহুস্ত্রী পরিবার লক্ষ্য করেন। Sociologist W.N Stephen’s (১৯৬৩) উল্লেখ করেছেন, যেসব সমাজ পিতৃতান্ত্রিক ও পুরুষ শাসিত এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পুরুষের হাতে ন্যস্ত, সেসব সমাজে বহুস্ত্রী পরিবারের আধিক্য দেখা যায় ।
খ. বহুস্বামী পরিবার (Polyandry family) : একজন মহিলা একাধিক পুরুষের সাথে বিবাহের মাধ্যমে বহুস্বামীর পরিবার গড়ে তোলে। যেখানে ঐ মহিলা একই সময়ে একাধিক পুরুষের সাথে পারিবারিক জীবনযাপন করতে বাধ্য থাকে। Murdock ১৯৪৯ ও ১৯৫৭ সালের গবেষণায় মাত্র ১% সমাজে বহুস্বামী পরিবার দেখতে পান। বহুস্বামী পরিবার দু’ভাগে বিভক্ত। যথা :
i. ভ্রাতৃসম্পর্কীয় পরিবার (Fraternal family) : এ ধরনের ভ্রাতৃসম্পর্কীয় পরিবারে পুরুষেরা পরস্পর রক্তের সম্পর্কযুক্ত ভাই হয়। সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য তিব্বতীয়দের মধ্যে এ প্রথা দেখা যায়।
ii. অভ্রাত্রীয় পরিবার ( Non-fraternal family) : এ ধরনের অভ্রাত্রীয় পরিবারে পুরুষেরা পরস্পর রক্তের সম্পর্কযুক্ত ভাই নয় অর্থাৎ ভ্রাত্রীয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত।
৩. রক্তসম্পর্কীয় বহুস্ত্রী (Sororal polygyny) : এটি রক্তসম্পর্কীয় বহুস্ত্রীর একটি বিশেষ রূপ । এ ব্যবস্থায় কোন পুরুষ যদি কোন পরিবারের একটি মেয়েকে বিয়ে করে পরিবার গঠন করে, তাহলে ঐ মেয়েটির অন্য বোনদের উপরও ঐ পুরুষটির স্ত্রীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। Cro-Indian-দের ভিতর এ প্রথা লক্ষণীয়।
৪. দলবদ্ধ বিবাহ পরিবার ( Group marriage family) : Morgan পরিবারের বিবর্তন আলোচনায় সমাজ বিকাশের একটি পর্যায়ে গোষ্ঠী বিবাহের কথা বলেছেন। বহুস্বামী স্বীকৃত সমাজে সামাজিক চাঞ্চল্য ও সংক্রমণ কাল উপস্থিত হলে একদল পুরুষ ও একদল মহিলা বিবাহের মাধ্যমে এ পরিবার গড়ে তোলে। পৃথিবীর খুব কম সমাজে বিবাহ পরিবার দেখা যায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি যে, পরিবারের কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক পরিবার সৃষ্টি হলেও সমাজে মৌলিক ও সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। মূলত বিভিন্ন প্রকার পরিবারের প্রকারভেদ আলোচনার মাধ্যমে সমাজে সর্বজনীনতা স্বীকৃত পায়। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সময় এবং সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিবারের প্রকারভেদসমূহ গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা পালন করে