বিবাহের গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, বিবাহের সমাজতাত্ত্বিক গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, বিবাহের গুরুত্ব কতটুকু? আলোচনা কর।
অথবা, বিবাহের তাৎপর্য উল্লেখ কর।
উত্তর৷৷ ভূমিকা : বিবাহ মানবসমাজে একটি বিশ্বজনীন রীতি। এ বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, আইন, ধর্ম প্রভৃতির মাধ্যমে নারী-পুরুষের এ সম্পর্ক রক্ষা করা হয়। বিবাহ ও পরিবার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিবাহ পরিবার গঠনের একমাত্র উপায়। সাধারণত যখন কোন নরনারীকে
একত্রে বসবাসের সামাজিক স্বীকৃতি দেয়া হয় তখন তাকে বিবাহ বলে।
বিবাহের গুরুত্ব : নিম্নে সংক্ষেপে বিবাহের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা করা হলো :
১. পরিবারের ভিত্তি : মানবসমাজের একটি আবশ্যিক ও ন্যূনতম একক প্রতিষ্ঠান পরিবার। কেবল বিবাহ ব্যবস্থার মাধ্যমেই সমাজ স্বীকৃত রীতি অনুসারে পরিবার প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে ।
২. যৌন প্রবৃত্তির পরিতৃপ্তি : বিবাহ ব্যবস্থা মানবসমাজে ব্যক্তি যৌন প্রবৃত্তিকে প্রশমিত করে। বিবাহ মানুষকে যৌন ক্ষুধার পরিতৃপ্তির সহজ ও স্বাভাবিক সুযোগ প্রদান করে। মোটকথা, ব্যক্তির যৌন কামনা, বাসনা, বিবাহিত জীবনযাপনের মাধ্যমে চরিতার্থ হয় এবং এভাবে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিত্বের স্বাভাবিক বিকাশের পথ সুগম ও স্বাভাবিক হয়।
৩. সন্তান প্রজনন ও বংশগতি রক্ষা : সন্তান প্রজনন ও বংশগতি রক্ষার ক্ষেত্রে বিবাহের ভূমিকা অনন্য। ব্যক্তির কাছে বিবাহের বড় উদ্দেশ্য হলো সন্তান প্রজনন ও বংশগতি অব্যাহত রাখা।
৪. নবজাতকের পরিচর্যা ও সামাজিকীকরণ : নবজাতক শিশুর পরিচর্যা, লালনপালনের ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে তেমন কোন সমস্যা দেখা যায় না। নবজাত শিশু পরিবারের মধ্যেই পিতামাতার ভরণপোষণ ও আদরযত্নে লালিতপালিত হয়। এ কারণে পরিবারে স্থায়িত্ব ও দীর্ঘ ধারাবাহিকতার প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে একমাত্র বিবাহ ব্যবস্থাই পরিবারের
ভিত্তিকে মজবুত করে এবং পারিবারিক বন্ধনকে স্থায়ী রূপদান করে।
৫. নৈতিক মূল্য : বিবাহের নৈতিক মূল্য বিরোধ বিতর্কের ঊর্ধ্বে। ব্যক্তি জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে বিবাহের নৈতিক মূল্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান আধুনিক সভ্য জগতে বিবাহ বন্ধন একটি পবিত্র বন্ধন। এ বন্ধন নরনারীর কামনা বাসনাকে প্রেমপ্রীতি ও গভীর ভালোবাসার মঞ্চে পরিণত করে। ফলে বিবাহিত জীবনের মাধ্যমে পাওয়া যায় পারস্পরিক সাহচর্য ও
সহানুভূতি, সন্তানের প্রতি স্নেহ মমতা প্রভৃতি।
৬. সমাজ স্বীকৃত যৌন সম্পর্ক : মানবসমাজ ও সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের সামগ্রিক স্বার্থে ব্যক্তির যৌন সম্পর্ক ও আচরণ নিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন। সুস্থ সমাজজীবনের স্বার্থে নারী-পুরুষের যৌন আচরণ অবাধ ও উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলতে দেয়া যায় না।
৭.সমাজের স্থায়িত্ব ও সংহতি : সমাজের স্থায়িত্ব ও সংহতি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিবাহের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের মধ্যে বিবাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন নতুন সামাজিক সম্পর্কের বন্ধন গড়ে উঠে। এ বন্ধনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবসমাজের ভিত্তি সুদৃঢ় হয় এবং এভাবে সমাজে স্থায়িত্ব ও সংহতির সৃষ্টি হয়।
৮. ধর্মীয় তাৎপর্য : ব্যক্তি জীবনে বিবাহের ধর্মীয় তাৎপর্য ও গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। প্রত্যেক ধর্মেই বিবাহ বন্ধন একটি
পবিত্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে আছে। বিবাহ বন্ধন সমাজে ব্যক্তির যৌন সম্ভোগে পরিতৃপ্তি সাধনের একমাত্র বৈধ উপায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, বিবাহ স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে এক বন্ধন। বিবাহ ব্যবস্থা সমাজে স্থায়িত্ব ও সংহতি সংরক্ষণ পরিবারের ভিত্তি, যৌন সম্ভোগের পরিতৃপ্তি, সন্তানসন্ততি জন্মদান ও লালনপালন প্রভৃতি কার্যাবলি সম্পাদন করে।