
ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079
বাউল দর্শনের গুরুবাদ বা মুর্শিদ তত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
admin
- 0
অথবা, বাউলদের গুরুবাদ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাউলদের মুর্শিদবাদ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাউল দর্শনে গুরুবাদ বলতে কী বুঝায়?
অথবা, বাউল দর্শনের আলোকে গুরুবাদ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : বাউল দর্শন মধ্যযুগের বাঙালির চিন্তা চেতনায় বিকশিত একটি মরমি চিন্তাধারা। বাউলদের ধর্ম সাধনা কিছু গুহ্য যোগক্রিয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। বাউল ধর্ম ও দর্শন মূলত সাধনভিত্তিক। বিভিন্ন ধর্মতত্ত্বের ও সাধন প্রণালির প্রভাব বাউল সাধনার উপর পড়েছে বলে বাউল সাধনায় কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসৃত হয় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাউল সাধন পদ্ধতিতে কিছু অভিন্ন তত্ত্বকে স্বীকার ও অনুশীলন করা হয়। যার মধ্যে গুরুবাদ বা মুর্শিদ তত্ত্ব অন্যতম।
গুরুবাদ বা মুর্শিদতত্ত্ব : বাংলার বাউলরা একটি গুরুবাদী বা পীরবাদী সম্প্রদায়। বাউলদের গরুবাদ বা পীরবাদ প্রাচীনকাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে বিকশিত গুরুবাদভিত্তিক ধ্যানধারণার প্রভাবজাত মিশ্র মতবাদ। বঙ্গে বৌদ্ধ, হিন্দু, বৈষ্ণব, কর্তাভজা ও সুফিদের অসম্ভব প্রভাবের ফলে বাউলদের মধ্যে গুরুভক্তিবাদ স্থান লাভ করে। যিনি বা যারা সাধনার মাধ্যমে নিজেদের অভিজ্ঞতার দ্বারা আধ্যাত্মিক সত্য লাভ করেন তিনি বা তাঁরাই গুরু বা মুর্শিদ, বাউল সাধনায় গুরু বা মুর্শিদকে সর্বোচ্চে স্থান দেয়া হয়। মুর্শিদই বাউলের সাধনার পথের সঙ্গী পথপ্রদর্শক। বাউলরা তাঁদের চলার পথে গুরুকে সহায়করূপে পেতে হয়, গুরুর সহায়তা ব্যতীত বাউলের সাধনা পূর্ণতা পায় না। তাই বাউল ধর্মে গুরুকে সর্বোচ্চে স্থান দেয়া হয়। তাইতো বাউল সম্রাট লালন শাহ বলেন, ‘গুরুপদে নিষ্ঠা মন যার হবে, যাবে তার সর্বস্ব সার অমূল্য ধন হাতে সেই পাবে। গুরু যার হয় কাণ্ডারি, চালায় তার অচল তরী, ভব তুফান বলে ভয় কি তারি, নেচে গেয়ে ভব পারে যাবে ! আগমে নিগমে তাই কয়, গুরুরূপে দীন দয়াময়।’ গুরু বলতে বাউলরা মানবগুরুকে বুঝেন, তবে এই মানবগুরুকে তাঁরা আবার ঈশ্বররূপেও কল্পনা করেন। এই গুরু বাউল শিষ্যদের রাগের আচার পদ্ধতি শিক্ষা দেন। আবার কখনো প্রকৃতি পুরুষঘটিত যোগ সাধনার সময় স্বয়ং উপস্থিত থেকে এ সাধন প্রণালির অতি গুহ্য বিষয়ে উপদেশ দেন। সাধক সাধিকার অন্তর্জীবন ও বহির্জীবন গুরুর নিকট সদা উন্মুক্ত।বাউল সাধকেরা গুরুকে ভক্তি ও ভজনা করে সত্য কিন্তু পূর্ববর্তী বঙ্গীয় ব্রাহ্ম ও সুফিদের ন্যায় আত্ম বিকিয়ে দেয়নি। গুরু যেখানে সহজিয়া’ গুরুর প্রাধান্য স্বীকার করে সেখানে তাঁরা গুরুকে অনুসরণ করে, কিন্তু যেখানে গুরু তাদের হৃদয় জাত, সহজসরল সত্য উপলব্ধির পথে অন্তরাল হয়, সেখানে তারা গুরুকে এড়িয়ে চলেন। অর্থাৎ বাংলার বাউল প্রত্যেকে এক একজন স্বাধীন চিন্তাশীল ব্যক্তি । আর এই চিন্তার পরিপক্বতা সাধনেই গুরুর দ্বারস্থ হন। গুরু গ্রহণের ক্ষেত্রে বাউলরা জাত বিজাত বিচার করে না। হিন্দু গুরুর মুসলমান শিষ্য ও মুসলমান গুরুর হিন্দু সাগরেদ গ্রহণে কোনো বাধা নেই। তাই বাউল মজাই শেখের শিষ্য কালাচাঁদ মিস্ত্রী, তাঁহার শিষ্য হারাই নমশূদ্র, তাহার শিষ্য দীনু জাতিতে নট, তাঁহার শিষ্য ঈশান যুগী, তাঁহার শিষ্য মদন।” সুতরাং দেখা যাচ্ছে গুরুবাদের ক্ষেত্রে বাউলরা সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে মানবতাবাদী আদর্শের অনুসারী।
উপসংহার : আলোচনার পরিসমাপ্তি বলা যায়, প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য প্রভাবে মুনি, আজীবিক, ভিক্ষু, সাধুসন্ন্যাসী, বৈষ্ণব বৈরাগী প্রভৃতির মতো বাউলরাও গুরুবাদী, বাউলরা তাঁদের দেহভিত্তিক সাধনায় পীর গুরু বা মরমিদের তথা পদ পরিদর্শক ও নির্দেশকের উপর গুরুত্বারোপ করেন সর্বান্তকরণে।
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079