General Knowledge

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যাগুলো কী কী?

অথবা, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যাগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে কী কী সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে?
উত্তর৷৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ। এদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনে পৃথিবীর মোট ভূ-ভাগের ৩,০০০ ভাগের ১ ভাগ হলেও জনসংখ্যায় এদেশের স্থান পৃথিবীতে নবম। আবার এদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে এদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব (২০০৯ সালের হিসাব মতে) ৯৭৭ জন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা : নিম্নে বাংলাদেশের জনসংক্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. খাদ্য ঘাটতি : খাদ্য ঘাটতি বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল সমস্যা। এদেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সে হারে খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চাল, ডাল, পিঁয়াজ ইত্যাদি খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষ মেট্রিকটন চাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাছাড়া হাজার হাজার টন পিঁয়াজ,
গম, ডাল ইত্যাদিও আমদানি করতে হয়। এতে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং বাণিজ্যিক ভারসাম্য ঘাটতির সৃষ্টি হয়।
২. দারিদ্র্য : এদেশের অর্ধেক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। ২০০৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে, মৌলিক চাহিদার ব্যয় পদ্ধতিতে এদেশে দারিদ্র্যের হার ৪৯% (উচ্চ দারিদ্র্য রেখা ব্যবহার করে)। অধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধিই এ দারিদ্র্যের মূল কারণ। এ দারিদ্র্য সমস্যা আবার স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, অপরাধ প্রবণতা ইত্যাদি সামাজিক সমস্যার জন্ম দিচ্ছে।
৩. বেকারত্ব : বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩৩% লোক বেকার। অন্য এক তথ্যে জানা যায়, এদেশে বেকারত্ব সংখ্যা ১.৫ থেকে ২ কোটি। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এদেশে বেকার জনগোষ্ঠীর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বেকার জনগোষ্ঠী আমাদের উন্নয়নের পথে একটি বড় অন্তরায়।
৪. স্বাস্থ্যহীনতা : জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে এদেশে স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এদেশের বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যহীনতার সৃষ্টি হচ্ছে। এক তথ্যে জানা যায়, এদেশে ৫২% লোক স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে এবং ৬৩% লোক স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চি হচ্ছে। ২০০৩ সালের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, এদেশে রেজিস্টার্ড ডাক্তার প্রতি জনসংখ্যা ৩,৮৬৬ জন এবং হাসপাতালের প্রতি বেডের বিপরীতে জনসংখ্যা ৪,১০৯ জন।
৫. নিরক্ষরতা : এদেশে প্রতি বছর যে হারে লোকসংখ্যা বাড়ছে তাতে নতুনদের জন্য গড়ে প্রতি বছর ৬,৪০০ নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা প্রয়োজন এবং হাজার হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা প্রয়োজন। তাছাড়া প্রয়োজন শিক্ষার আরও নানা ধরনের উপকরণ। কিন্তু এত অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিভাবে প্রতি বছর গড়ে তোলার সামর্থ্য আমাদের নেই। ফলে শিক্ষার উপর তা বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
৬. পুষ্টিহীনতা : অধিক জনসংখ্যা দেশের পুষ্টির উপরও প্রভাব ফেলে। কারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের পরিবারের জন্য ন্যূনতম পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে পারে.না। এ কারণে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে এদেশের ৯ জনই পুষ্টিহীনতার শিকার। শুধু তাই নয়, পুষ্টিহীনতা বিশেষত ভিটামিন এর অভাবে এদেশে
প্রতিদিন ১০০ জন শিশু অন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পুষ্টিহীনতার কারণে রোগব্যাধির হারও বাড়ছে।
৭. অপরাধ প্রবণতা : দারিদ্র্যের ও বেকারত্বের নিষ্ঠুর কষাঘাতে এদেশের অনেক লোক আজ অপরাধ প্রবণতার সাথে যুক্ত হচ্ছে। এদেশে আজ খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, পকেটমার, ডাকা তি, মাদকাসক্ত, অপহরণ, নারী ও শিশু পাচার, যৌতুক ইত্যাদি অপরাধগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এসব অপরাধের মূল উৎস অতিরিক্ত জনসংখ্যা।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উল্লেখিত সমস্যাগুলো ছাড়াও এদেশের জনসংখ্যা আরও কতিপয় সমস্যা সৃষ্টি করছে। যেমন- ভবঘুরে বৃত্তি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভূমিহীন সমস্যা, বাসস্থান সমস্যা, যৌতুক সমস্যা ইত্যাদি। এগুলো জনজীবনকে করে তুলছে বিপর্যস্ত, মানুষের জীবনে বয়ে আনছে অভিশাপের ছায়া, জীবনযাপন প্রণালী হচ্ছে নিম্নতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!