General Knowledge

বাংলাদেশে কীভাবে দ্রুত শিল্পায়ন সম্ভব তার বর্ণনা দাও।

অথবা, বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নের উপায়গুলো কী কী?
কি অথবা, বাংলাদেশে কীভাবে দ্রুত শিল্পায়ন সম্ভবতা আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নের উপায়সমূহ বর্ণনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
আধুনিক সমাজের অর্থনীতি ও রাজনীতি, সমাজ সংস্কৃতি ইত্যাদির উন্মেষ ও বিকাশের অন্যতমলে চালিকাশক্তি হলো শিল্পায়ন ও প্রযুক্তি। বর্তমানে বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো রুগ্নতার শিকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানাবিধ চক্রান্ত, দুর্নীতি, কার্যকরী শিল্পনীতির অভাব প্রভৃতির কারণে বাংলাদেশের শিল্পায়নের গতি পিছিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। শিল্পায়নের এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বয়ংসম্পূর্ণ করে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
শিল্পায়ন (Industrialization) : এক কথায় শিল্পায়ন হচ্ছে শিল্পের বিকাশ। সাধারণ অর্থে শিল্পায়ন হলো কলকারখানা স্থাপন এবং সেগুলোর প্রসার। বিশেষভাবে বলা যায় যে, শিল্পায়ন হচ্ছে কৃষিজাত দ্রব্যের রূপান্তর ঘটিয়ে অকৃষিজ পণ্যসমাগ্রী উৎপাদন এবং অকৃষিজ পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যন্ত্র চালান ও অকৃষিজ পেশার সৃষ্টি।
বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নের উপায় : বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নের কয়েকটি কৌশল নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলে :
১. কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন : বাংলাদেশের দ্রুত শিল্পায়নের জন্য কৃষির উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। কারণ আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০% ই কৃষিনির্ভর এবং পল্লি অঞ্চলে বসবাস করে। এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি পেলে তারা অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় করবে এবং শিল্পখাত সম্প্রসারিত হবে।
২. শিল্পের উদ্যোগ বৃদ্ধি : বাংলাদেশে প্রয়োজন অনুযায়ী শিল্পকারখানা গড়ে উঠেনি। শিল্পখাতের প্রসার ও উন্নয়নের জন্য যত বেশিসংখ্যক উদ্যোক্তা শিল্পকারখানা স্থাপন করতে এগিয়ে আসে সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য সরকার বিভিন্ন রকম উৎসাহমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। –
৩. বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ : এদেশের দ্রুত শিল্প উন্নয়নের জন্য বেসরকারি খাতে পুঁজি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা দরকার। এজন্য ঋণ সুবিধা, কর মওকুফ, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি সুবিধা প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. শিল্পে ঋণ বৃদ্ধি : শিল্পক্ষেত্রে সহজ শর্তে ও কম সুদে প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ করতে হবে। এজন্য শিল্পব্যাংক, শিল্প ঋণ সংস্থা, বিসিক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ দান ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
৫. কারিগরি শিক্ষার প্রসার : শিল্পায়নের জন্য দক্ষ কারিগর প্রয়োজন। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কারিগর শ্রেণি সৃষ্টি করতে হবে। এজন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা দরকার।
৬. রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের উন্নয়ন : বাংলাদেশে সরকারি খাতের বেশ কিছু শিল্পকারখানা বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে চলছে। সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লোকসান হ্রাসের জন্য বিশেষ তদারকি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. খনিজ ও শক্তি সম্পদের উন্নয়ন : বাংলাদেশের দ্রুত শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এছাড়া শিল্পের জন্য তেল, কয়লা, লোহা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের জরিপ ও অনুসন্ধান কাজ অব্যাহত রাখা দরকার।
৮. মূলধন গঠন বৃদ্ধি : শিল্পক্ষেত্রের অভ্যন্তরীণ মূলধন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দেশে মূলধন গঠনের হার বাড়াতে হবে। এজন্য জনগণকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা দরকার। জনগণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় যাতে কার্যকরভাবে শিল্পে নিয়োগ করা যায়। সেজন্য কার্যকরভাবে শিল্পে নিয়োগ করা যায় সেজন্য শেয়ার বাজারস হ দেশের সমগ্র পুঁজি বাজারে উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
৯. শ্রমিক সমস্যার সমাধান : বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য শ্রমিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। এজন্য শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিক কলহ ও শ্রম অসন্তোষ দূর করার জন্য সুষ্ঠু ও কার্যকর শ্রমনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শ্রম আইন ও স্বল্প সময়ে বিচারযোগ্য আদালত থাকা দরকার।
১০. বিদেশে বাজার সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো : পুরাতন বা অপ্রচলিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে আধুনিক শিল্পকারখানা স্থাপন করে বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া উচিত। তাছাড়া শিল্পপণ্যের উৎকর্ষ সাধন করে যথাযথ প্রচারাভিযান চালানো উচিত
১১. কাঁচামালের যোগান বৃদ্ধি : বাংলাদেশে পাটকল ছাড়া প্রায় সব কারখানার কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাস এবং উৎস মুখে ভ্যাট রহিত করলে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং উৎপাদনের পরিমাণ বাড়বে।
১২. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলার জন্য শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাই শিল্পক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
১৩. উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার : বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য শিল্পকারখানা বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ অপরিহার্য। এর ফলে শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি, ব্যয় হ্রাস ও পণ্যের মান উন্নত হবে।
১৪. সুষ্ঠু শিল্পনীতি প্রণয়ন : আমাদের দেশে দ্রুত শিল্পায়নের জন্য সুষ্ঠু শিল্পনীতি প্রণয়ন করতে হবে। শুধু শিল্পনীতি প্রণয়ন করলে হবে না, তা যেন বাস্তবায়নের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে সে দিকে খেয়াল রাখা উচিত। তাছাড়া জাতীয় অর্থনীতিতে তা কতটুকু অবদান রাখতে পারে সে ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, শিল্প হচ্ছে জাতির বড় সম্পদ। তাই য়ে ব্যবস্থাপনাতেই হোক শিল্পলগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল বেশি, কর্মী কম, দায়িত্ব বেশি, ঝুঁকি কম, ঋণ দাতাদের ক্ষেত্রে সাবধানতা বেশি, আদায়ের কঠোরতা কম এবং পৃষ্ঠপোষকতা বেশি রাজস্ব কম এ নীতি গ্রহণ করলে তবেই সম্ভব হবে কাঙ্ক্ষিত ও দ্রুত শিল্পায়ন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!