অথবা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকেই ঢাকা শহরসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে ই.পি.আর, আনসার, ছাত্র, শ্রমিক, বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী এবং সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে উঠে। কিন্তু অতর্কিত আক্রমণের মুখে যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল তা সুপরিকল্পিত ছিল না এবং
কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিতও ছিল না। তাই মুজিবনগরে অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ চলছিল স্বতঃস্ফূর্ত ও বিক্ষিপ্তভাবে। এরপর পেশাদার সৈন্যদের নিয়ে নিয়মিত, স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী গঠিত হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরসমূহের বর্ণনা : নিচে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরসমূহের বিবরণ দেওয়া হলো :
সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল এম. এ. জি. ওসমানী সুষ্ঠুভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র যুদ্ধক্ষেত্রকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করেন। প্রতিটি সেক্টরের ভার একজন সেক্টর কমান্ডারের হাতে অর্পণ করা হয়। নিচে বিভিন্ন সেক্টর এবং সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডারগণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো :
সেক্টর নং-১ : চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ফেনী (ফেনী নদী পর্যন্ত) নিয়ে এক নম্বর সেক্টর গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। এরপর এ সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেজর মোহাম্মদ রফিক।
সেক্টর নং- ২ : নোয়াখালী, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা, ঢাকা জেলার ঢাকা এবং ফরিদপুর জেলার কিছু অংশ নিয়ে ২নং সেক্টর গঠিত। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ এবং পরবর্তী সময়ের জন্য দায়িত্বে ছিলেন মেজর এ.টি.এম. হায়দার।
সেক্টর নং- ৩ : আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে পূর্বদিকে কুমিল্লা জেলা। সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, ঢাকা জেলার কিছু অংশ এবং ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমাকে নিয়ে ৩নং সেক্টর গঠিত হয়। প্রথমে এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর কে.এম. শফিউল্লাহ এবং পরবর্তীতে মেজর এ.এন.এম. নুরুজ্জামান।
সেক্টর নং- ৪ : সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল, খোয়াই, শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক নিয়ে ৪নং সেক্টর গঠিত হয়। এ সেক্টরের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন মেজর সি.আর. দত্ত।
সেক্টর নং- ৫ : সিলেট জেলার পশ্চিমাঞ্চল, সিলেট ডাউকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ-ময়মনসিংহ জেলার সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে ৫নং সেক্টর গঠিত। এ সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী।
সেক্টর নং- ৬ : রংপুর জেলা ও দক্ষিণ দিনাজপুরের ঠাকুরগাঁও মহকুমাকে নিয়ে ৬নং সেক্টর গঠিত হয়। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন উইংকমান্ডার এম.কে. বাশার।
সেক্টর নং- ৭ : দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল এবং রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা নিয়ে ৭নং সেক্টর গঠিত হয়। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর নাজমুল হক ও মেজর কাজী নুরুজ্জামান।
সেক্টর নং- ৮ : কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুরের অধিকাংশ অঞ্চল এবং খুলনা জেলার দৌলতপুর, সাতক্ষীরা সড়ক পর্যন্ত ৮নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত মেজর আবু ওসমান চৌধুরী এবং পরে এম.এ. মঞ্জুরের উপর এ সেক্টরের দায়িত্ব ছিল।
সেক্টর নং- ৯ : দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে ৯নং সেক্টর গঠিত হয়। এ সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর এম.এ. জলিল (ডিসেম্বর মাসের শুরু পর্যন্ত)। ডিসেম্বরের চূড়ান্ত যুদ্ধের শেষ কয়দিন মেজর এম. এ. মঞ্জুর এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন।
সেক্টর নং- ১০ : নৌ-কমান্ডো সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ও অভ্যন্তরীণ নৌপ থকে নিয়ে ১০নং সেক্টর গঠিত ছিল। এ সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন নৌ-কমান্ডাররা।
সেক্টর নং- ১১ : কিশোরগঞ্জ মহকুমা ময়মনসিংহ জেলা টাঙ্গাইল জেলাকে নিয়ে ১১নং সেক্টর গঠিত হয়। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের। নভেম্বর মাসে তিনি গুরুতরভাবে আহত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম হামিদউল্লাহ এখানকার দায়িত্বে নিয়োজিত হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের হত্যাকাণ্ডের পর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্যদিয়ে শুরু দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ । তাস্থায়ী সরকার গঠন ও জেনারেল ওসমানীকে মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ইন চিফ নিযুক্ত সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্তকরণ ও স্বতন্ত্র তিনটি নিয়মিত বাহিনী গঠনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সামরিক সংগঠন সুসংগঠিত রূপ লাভ করে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a6%b6%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%a7/
admin

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!