বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য কী?

অথবা, বাংলাদেশের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য লিখ।
অথবা, বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে যাহা জান লিখ ।
উত্তরা৷ ভূমিকা : পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। দীর্ঘ ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের অবস্থান সুনিশ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূপ্রকৃতি যা বাংলাদেশকে নিজস্ব স্বকীয় সত্তা দান করেছে। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে সামান্য পাহাড়ি অঞ্চল এবং উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাংশ সীমিত উচ্চভূমি ব্যতীত সমগ্র বাংলাদেশ নদীবিধৌত এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য : বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বদ্বীপ। দেশটির অধিকাংশ অঞ্চল নদীবিধৌত পলি দ্বারা গঠিত। তবে দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে পার্বত্য ভূমি বিদ্যমান। সর্বোপরি বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি খুবই মনোরম ও বৈচিত্র্যময়। নিচে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলো :
১. টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ : বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের পাহাড়ি অঞ্চল হলো টারশিয়ারি যুগের পাহাড়। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এলাকাগুলো নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। হিমালয় পর্বত বিস্তৃত ও গঠিত হওয়ার সময় এসব পর্বতের সৃষ্টি হয়। এ পার্বত্য ভূমির বৈশিষ্ট্য হলো বেলে পাথর, স্লেট জাতীয় প্রস্তর এবং কর্দমের সংমিশ্রণ দ্বারা গঠিত। এছাড়া এ অঞ্চলে ছোটো ছোটো ঝোপজঙ্গল ও বৃক্ষরাজি বিদ্যমান। টারশিয়ারি যুগে হিমালয় পর্বত গঠিত হওয়ার সময় এ সকল পাহাড় সৃষ্টি হয় বলে একে টারশিয়ারি পাহাড় বলে। এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ বাঁশ, বেত জাতীয় উদ্ভিদ জন্মে। এছাড়া বাংলাদেশের দীর্ঘতম বৃক্ষ বৈলাম বৃক্ষ বান্দরবানে জন্মে । কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী প্রভৃতি নদী এ অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করেছে।
২. প্লাইস্টোসিন কালের পাহাড় বা সোপানসমূহ : প্রায় ২৫,০০০ বছর পূর্বে প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ গঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ অঞ্চলের মাটির রং লাল ও ধূসর। প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ নিম্নরূপ :
ক. বরেন্দ্রভূমি,
খ. মধুপুর ও ভাওয়ালের গড়,
গ. লালমাই পাহাড়।
এছাড়া এ অঞ্চলে আনারস, কমলালেবু সহ নানা প্রকার ফলজ ও কাষ্ঠল বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণে জন্মে। এ অঞ্চল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ । প্রাকৃতিক গ্যাস, চুনাপাথর, কয়লা প্রভৃতি খনিজ বিদ্যমান ।
৩. সাম্প্রতিক কালের প্লাবন সমভূমি : টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ এবং প্লাইস্টোসিন কালের সোপানসমূহ ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশ বিস্তীর্ণ সমভূমি। প্লাবন সমভূমি বাংলাদেশের উত্তরাংশ থেকে উপকূলের দিকে ক্রম নিম্নভাবে নেমেছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর এদের শাখা নদী ও উপনদী বাহিত পলিমাটি দ্বারা এ অঞ্চল গঠিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এদের গড় উচ্চতা ৯ মিটার। সমুদ্র সমতল হতে দিনাজপুরের উচ্চতা ৩৭.৫ মিটার আর যশোরের উচ্চতা ৮ মিটার। এ অঞ্চলের আয়তন ১,২৪,২৬৫ বর্গমিটার। এদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
৪. উপকূলীয় বদ্বীপ অঞ্চল : উপকূলীয় বদ্বীপ অঞ্চলকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-
ক. মৃতপ্রায় বদ্বীপ : কুষ্টিয়া ও যশোর জেলার গড়াই, মধুমতি, বিধৌত এলাকা খুলনা, ফরিদপুরের কিছু অংশ।
খ. সক্রিয় বদ্বীপ : মেঘনা মোহনা ও গড়াই মধুমতি মুখ, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার সম্মিলিত স্রোতধারা দ্বারা গঠিত ভূমিই হলো সক্রিয় বদ্বীপ । বরিশাল, পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর প্রভৃতি এর অন্তর্ভুক্ত।
গ. অপরিপক্ব বদ্বীপ : নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলীয় স্রোতজ সমভূমি এ অঞ্চলের অন্তর্গত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভূপ্রকৃতি ও অবস্থান একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ভূপ্রভৃতি ও অবস্থানের দ্বারা একটি দেশের সমাজ ও জাতি গড়ে উঠে এবং স্বকীয় সত্তা ও সংস্কৃতি গড়ে উঠে। ভূপ্রকৃতি বৈশিষ্ট্য সমাজে বসবাসরত মানুষের উপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যময় ও নৈসর্গিক। এদেশের ভূপ্রকৃতি, এদেশের জনগণের জীবন ধারণ ও সামগ্রিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।