বাংলাদেশের নারীদের সামাজিক অবস্থা আলোচনা কর ।
অথবা, বাংলাদেশে সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী যারা নানাবিধ সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। হয়েছে অবদমিত। তার মেধা ও শ্রমশক্তিকে সমাজ ও দেশগঠনে সম্পৃক্ত করা হয় নি। অতীতে দেশের জনসাধারণে জনসম্পদের উন্নয়নের জন্য যেটুকু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল সেখানে নারীসমাজ ছিল অবহেলিত। বর্তমানে যদিও নার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযো সৃষ্টি করা হয়েছে তবুও সার্বিকভাবে নারী জাতির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে তেমন কোন বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি।
সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান : বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন সামাজিক দিক দিয়ে নারীদের অবস্থান নিয় আলোচনা করা হলো :
১. সামাজিক অবস্থান : বাংলাদেশের নারীদের সামাজিক অবস্থান নেতিবাচক। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় চো রাখলেই আমরা দেখি নারীনির্যাতন, যৌতুকের জন্য নারী হত্যা, নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি এসিড নিক্ষেপ ও অন্যান্য নারীনির্যাতনমূলক অপরাধ অনেকট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে
১০১ দোররা ও গর্ত করে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনাও এদেশে ঘটেছে। নারীনির্যাতনের ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক বিষয হলো রাষ্ট্রীয় তথা পুলিশের নির্যাতন। অতীতে আইনের রক্ষক পুলিশের হাতে বেশ কিছু নারীনির্যাতিত হয়েছে। এমনক পুলিশ কর্তৃক নারী ধর্ষিত ও নিহত হয়েছে। এগুলো খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যা পত্রপত্রিকা খুললেই আমাদে চোখে পড়ে। এছাড়াও যে বিষয়গুলো ধ্রুব সত্য অথচ আমরা বুঝতে চেষ্টা করি না যে সত্যিকার অর্থে নারীর সামাজিকভাবে কতটা পিছিয়ে আছে। বিষয়গুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
ক. সামাজিক মর্যাদা : বাংলাদেশের নারীদের সামাজিক মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান পুরুষের চেয়ে অনেক কম এদেশে সন্তান হিসেবে পুত্রসন্তান আকাঙ্ক্ষিত এবং কন্যাসন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত। অনাকাঙ্ক্ষা, অবহেলার মধ্য দিয়ে শুরু হয নারীর জীবনযাত্রা। পর্দাপ্রথা ও নানাবিধ নিষেধের মধ্য দিয়ে জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এদেশের সমাজব্যবস্থায পুরুষরা মনে করে তারাই সর্বেসর্বা।
খ. পারিবারিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে : মেয়েদের পুরো জীবনটাই বাবা, ভাই ও স্বামী মতামতের উপর তার জীবনের গত নির্ধারিত হয়। পরিবারের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নারীদের মতামত চাওয়া হয় না বা তাদের কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না।
গ. দুর্বল হিসেবে গণ্য : মেয়েদের দৈহিকভাবে পুরুষের তুলনায় দুর্বল, কম মেধাসম্পন্ন ইত্যাদি বলা হয়। উভয়ে মধ্যে শারীরিক কিছু ভিন্নতা আছে, কিন্তু মানুষ হিসেবে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের দুর্ব ভাবতে শেখানো হয়। এ কারণেই মেয়ে হালকা পরিশ্রমের কাজ করে এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে সবল এবং সাহসিকতা মনোভাব পোষণ করা হয়।
ঘ. ফতোয়াবাজদের ধর্ম ব্যবসায়ীরা শিকার : ফতোয়াবাজ, ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্ম প্রচারের নামে নারী বিরোধ জেহাদকেই প্রধান লক্ষ্য বলে ধরেছে। তারা নির্যাতিত নারীদেরকে ‘শালীন হতে বলে কিন্তু নির্যাতন সম্পর্কে কোন কথ বলে না । এক্ষেত্রে চলচ্চিত্র এবং অনেক পত্রপত্রিকার ভূমিকা তাদেরই মতো। শিক্ষিত সমাজের একটা বড় অংশ তা মেন নেয়। কেননা তারাও একই ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী।
ঙ. শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অনগ্রসরতা : সামাজিক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নারীরা অধস্তন অবস্থানে অধিষ্ঠিত। শিক্ষ সমাজের একটি অংশ, কিন্তু বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের পূর্বে মহিলাদের তুলনায় পুরুষর দ্বিগুণ শিক্ষিত ছিল। বর্তমানে সবার জন্য শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করার এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীদেরকে সুযোগ দেয
়া ফলে মহিলারা শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীর যেভাবে বৈষম্যের স্বীকার তা অকল্পনীয়। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অধস্তন অবস্থায় রয়েছে। অথচ বিপুল জনসংখ্যা অর্ধেক নারী হলেও তাদের উন্নয়নে কোন বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না ফলে ব্যাহত হচ্ছে সমগ্র জাতির উন্নয়ন।