বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে জ্ঞাতি সম্পর্কের ভূমিকা আলোচনা কর ।

অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে জ্ঞাতি সম্পর্ক কেমন প্রভাব বিস্তার করে আলোচনা কর।
অথবা,বাংলাদেশের গ্রামীণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে জ্ঞাতি সম্পর্কের অবদান বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ‘
Kinship’ শব্দটি আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী Morgan সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন। Kinship শব্দটির শব্দগত অর্থ হলো জ্ঞাতি সম্পর্ক। জ্ঞাতি সম্পর্ক হচ্ছে বংশানুক্রমিকভাবে নির্ণীত মানবসমাজের সামাজিক সম্পর্কের সুনির্দিষ্ট রীতি যা বিবাহ প্রথা তথা যৌনসম্পর্ক এবং রক্ত সম্পর্ক হতে উদ্ভূত। বাংলাদেশের গ্রামীণ সামাজিক ও সাংস্কৃতির ক্ষেত্রে জ্ঞাতি সম্পর্কের ভূমিকা : গ্রামীণ সমাজ জীবনে জ্ঞাতিরা সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার জন্য শিশুকে প্রেরণা দিয়ে থাকে। জ্ঞাতিরাই কোনো শিশুকে পারিবারিক ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখার জন্য ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলে। কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে জ্ঞাতিরা ধর্মীয়ভাবে তার জন্য রোগমুক্তির প্রার্থনা করে। কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার জানাজা ও দাফন কাজ সম্পন্ন করে থাকে। জ্ঞাতিদের হাতেই একজনের সামাজিকীকরণের কাজ অর্পিত হয়। একটা মেয়ে তার জ্ঞাতির কাছ থেকেই শিক্ষা নেয় কি করে স্বামীর সংসারে মেয়ে যাবতীয় গৃহস্থালীর কাজ সম্পন্ন করবে। ছেলেমেয়েদের বিয়ে সাদিতে গ্রামের মানুষ জ্ঞাতিদের ছাড়া এক ধাপ অগ্রসর হতে পারে না। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যেমন- মিলাদ-মাহফিল, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, শবেবরাত ইত্যাদি অনুষ্ঠানে জ্ঞাতিরা নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট থাকে। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও জ্ঞাতিগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন পূজা পার্বণে তারা তাদের আত্মীয়স্বজন নিয়ে মহাধুমধামের মধ্যে বিভিন্ন উৎসব পালন করে থাকে। এককথায়, গ্রামীণ সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহে জ্ঞাতিদের অংশগ্রহণ ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, আধুনিক গ্রামীণ সমাজে জ্ঞাতি সম্পর্কের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। কারণ গ্রামীণ মানুষ অকৃত্রিম মায়ামমতা ছিন্ন করে কৃত্রিমতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পিছনে মূলত বেশি দায়ি হচ্ছে শিল্পায়ন ও শহরায়ন।