
ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079
বঙ্গভঙ্গের ফলাফল বা তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৮৫৭ সালের সিপাহিবিদ্রোহের পর ভারত শাসনের দায়িত্ব মহারানি নিজ হাতে গ্রহণ করেন।
ফলে ক্রমান্বয়ে রানির রাজপ্রতিনিধি হিসেবে লর্ড এলগিনের পর লর্ড কার্জন ভাইসরয় নিযুক্ত হন। লর্ড কার্জনের সময় বিশাল আয়তন বিশিষ্ট বাংলা প্রেসিডেন্সি একজন ছোটলাটের দ্বারা শাসন করা ছিল কষ্টকর ব্যাপার। তাই প্রশাসনিক সুবিধার অজুহাত দেখিয়ে লর্ড কার্জন বাংলা প্রেসিডেন্সি বিভক্ত করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও আসামকে নিয়ে পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে একটি প্রদেশের সৃষ্টি করা হয়; যার রাজধানী করা হয় ঢাকা। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও
উড়িষ্যাকে নিয়ে গঠিত হয় বাংলা প্রদেশ; যার রাজধানী করা হয় কলকাতা। আর এটাই ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। বিভিন্ন কারণে যেমন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় আবার বিভিন্ন কারণে তা রদ করা হয়। আর এর ফলাফলও ছিল সুদূরপ্রসারী।
বঙ্গভঙ্গের ফলাফল : বাংলার রাজনীতিতে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। নিচে বঙ্গভঙ্গের ফলাফল উপস্থাপন করা হলো :
১. মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া : পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে বাংলা বিভাগ ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকার
নবাব সলিমুল্লাহ ব্রিটিশদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। এছাড়া বাংলা বিভাগের ফলে ঢাকা পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং নতুন রাজধানী ঢাকাতে সচিবালয়, হাইকোর্ট, আইন পরিষদ ভবন, নতুন নতুন সুরম্য অট্টালিকা এবং রাস্তাঘাট নির্মিত হতে থাকে। তাছাড়া পূর্বে মুসলমান ছেলেরা ডিগ্রি পাস করেও ভালো চাকরি পেত না, কিন্তু নতুন প্রদেশে তারা নতুন চাকরির সুযোগ লাভ করেছিল। ফলে মুসলমানরা শিক্ষাদীক্ষা, চাকরি, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে উন্নতি অর্জন করে।
২. হিন্দুদের প্রতিক্রিয়া : ১৯০৫ সালে বঙ্গ বিভাগ সম্পন্ন হলে পূর্ব বাংলার মুসলমান জনগণ আনন্দে উদ্বেলিত হয়। কিন্তু হিন্দু জমিদার, ব্যবসায়ী, বণিক সমিতি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের একটি নীতি হিসেবে গ্রহণ করে। কারণ তারা মনে করে যে, এটা ছিল হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে উদীয়মান বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধ্বংস এবং ভারতের রাজনৈতিক যাত্রাকে বাধা প্রদান করার চক্রান্ত। সুতরাং তারা বঙ্গভঙ্গ রদের দাবি করেন এবং বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে রক্ষার নামে একটি তীব্র স্বদেশী আন্দোলন গড়ে
তোলেন। ফলে অতি দ্রুত বঙ্গ বিভাগের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে উঠে ব্রিটিশ শাসনের ভীতকে কাঁপিয়ে তোলে এবং সরকার বঙ্গভঙ্গকে টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হন।
৩. সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি : বাংলা প্রেসিডেন্সি ছিল অসাম্প্রদায়িক অঞ্চল। বহু জাতি, বহু বিচিত্র ভাষাভাষী মানুষ এখানে বসবাস করতো। যা ছিল তাদের ঐক্যবোধের মূল চাবিকাঠি। আর এ ঐক্যবোধ ব্রিটিশ শাসনের জন্য সুখকর ছিল না। তাই তারা বুঝতে পারেন যে, বাংলা প্রেসিডেন্সির জনসাধারণের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়িয়ে দিতে পারলে আর কোন দিন তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। তাই সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সুপারিশ করেন।
৪. জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা : বঙ্গভঙ্গের ফলে দুই শ্রেণির দু’ধরনের মানসিকতা লক্ষ করা যায়। দেখা যায়,
মুসলমানরা বঙ্গভঙ্গকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মধ্যে জাতীয় চেতনার সঞ্চার ঘটান এবং এ সিদ্ধান্ত বহাল রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালান।
৫. হিন্দু নেতাদের প্রেরণায় স্বদেশী আন্দোলন : বঙ্গভঙ্গকে হিন্দু নেতারা বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ বলে বর্ণনা করেন।
অনেকে এ ধরনের ব্রিটিশ সরকারের রাজনৈতিক চক্রান্তের সমালোচনা করেন। জাতীয়তাবাদী অনেক রাজনীতিবিদদের
ধারণা হলো যে, ব্রিটিশ সরকার তাদের যে জাতীয়তাবোধ তা ধ্বংস করার জন্য এ কাজ করার পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। তাই তারা জাতীয়তাবোধকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ফলে একপর্যায়ে এটা স্বদেশী আন্দোলনে পরিণত হয়।
৬. সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন : বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী নেতারা ভারত মাতাকে কালী আখ্যা দিয়ে বঙ্গ মাতার অঙ্গচ্ছেদ বলে জনসম্মুখে তুলে ধরেন। ফলে একপর্যায়ে তারা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ শুরু করে। এতে বিভিন্ন স্থানে অনেক গোলযোগ ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সমগ্র ভারতে এর ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়। ক্ষুদিরাম
ও প্রফুল্ল চাকী এ ধরনের এক ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন বলে তাদের ফাঁসি হয়।
৭. বিলেতি দ্রব্য বর্জন আন্দোলন : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে বিশাল গোলযোগ দেখা .. দেয়। কারণ বঙ্গভঙ্গের ফলে কলকাতার বাবুদের ব্যবসায় বাণিজ্যের স্বার্থে আঘাত লাগে। তাই তারা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রচারণায় সামিল হন এবং একপর্যায়ে তারা স্বদেশী আন্দোলনকে বিলেতি দ্রব্য বর্জন আন্দোলনে পরিণত করার হুমকি দেন। তারা মত পোষণ করেন যে, বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে তারা বিলেতি দ্রব্য বর্জন করবেন। ফলে ইংল্যান্ডের শিল্পকারখানার মালিকরা ভয় পান এবং তারা ব্রিটিশ সরকারকে চাপ দেন। ফলে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে। একপর্যায়ে ১৯১১ সালে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গভঙ্গ রদ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলেচনা শেষে বলা যায়, ব্রিটিশ ভারতের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ এতে দেখা যায়, দু’শ্রেণির মধ্যে সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি। মুসলমানদের নিকট বঙ্গভঙ্গ ছিল
আশীর্বাদস্বরূপ এবং এটা তারা সাদরে গ্রহণ করে। তবে ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার জন্য প্রশাসনিক সুবিধার্থে ১৯০৫ সালে কার্যকর করে। পরবর্তীতে বিভিন্নমুখী বিরোধিতার কারণে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়। পরিশেষে বলা যায়, বঙ্গভঙ্গ রদ করায় হিন্দুরা আবার ব্রিটিশ ভক্তে পরিণত হয় আর মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি একবারে আস্থা হারিয়ে ফেলে।