General Knowledge

ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব আলোচনা কর।

অথবা, মনঃসমীক্ষণ বিষয়ে ফ্রয়েডের তত্ত্বটি আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানুষ সামাজিক জীব। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে সামাজিক পরিমণ্ডলেই বসবাস করতে হয়। সামাজিকীকরণ হলো অন্যতম সামাজিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষ সামাজিক বিধিসম্মত আচরণ শিখে এবং এরই দ্বারা সে সমাজের সদস্যরূপে গড়ে উঠে। মানবশিশুর বেঁচে থাকার জন্য শুধু খাদ্য ও বাসস্থানের প্রয়োজন হয় তা নয়, বরং তাদের মানবিক ও মানসিকভাবে বৃদ্ধির জন্য উদ্দীপকের প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক সমাজে মানবশিশুকে শিক্ষা দেয়ার জন্য কতকগুলো উপায় আছে, যার মাধ্যমে শিশু নিজের ব্যক্তিত্বকে গঠন করতে পারে। শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে এ সামাজিক প্রশিক্ষণকে বলা হয় সামাজিকীকরণ বা Socialization।
সামাজিকীকরণের তত্ত্বসমূহ : সামাজিকীকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তত্ত্ব প্রদান করেছেন। আর এসব তত্ত্বের প্রত্যেকটি তত্ত্ব মানুষের সামাজিকীকরণের এক একটি বিশেষ দিকের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। ব্যক্তির সামাজিকীকরণকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে Frued, Mead, Durkheim, Cooley প্রমুখ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তত্ত্ব প্রদান করেছেন। এ তত্ত্বগুলো নিরূপ :
ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব, কুলির Looking glass self তত্ত্ব এবং
৩. মীডের Self তত্ত্ব নিম্নে ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব আলোচনা করা হলো :
ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব : Sigmund Freud ছিলেন মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্বের প্রবক্তা ও বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী। তিনি আধুনিক সমাজবিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে Freud ই প্রথম ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্পর্কে এক অর্থবহ আলোচনার অবতারণা করেন এবং ব্যক্তিত্বের কাঠামো নিরূপণে বাল্যকাল ও
শৈশবের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। Freud এর মতে, “মানুষের সকল আচার আচরণ পারস্পরিক সম্পর্ক ও চিন্তাভাবনা, কামশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।” এজন্য ব্যক্তিত্বের বিকাশকে তিনি কামশক্তির প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করেছেন। ব্যক্তিত্বের বিকাশে Freud এর তত্ত্বকে তাই কেউ কেউ কামবৃত্তির তত্ত্ব বলে আখ্যায়িত করেছেন। Freud ব্যক্তির মানসিক
অবস্থাকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
ক. আদিসত্তা (Id),
খ.অহম (Ego) এবং
গ. অধিসত্তা (Super ego)|
ক. আদিসত্তা (The Id) : Id হচ্ছে ব্যক্তিত্বের প্রাথমিক স্তর। এ স্তরটি জন্মগত। এটি সুখনীতি দ্বারা পরিচালিত। সবসময় আনন্দ পেতে চায়। এটি ন্যায়অন্যায় বা কোন নৈতিকতার ধার ধারে না। সমস্ত জৈবিক কামনা- বাসনা এ স্তরে প্রকাশ পেতে চায় ।
খ. অহম (The Ego) : আদি সত্তার কামনা-বাসনার যথাযোগ্য বাস্তব সংগতিসাধনের জন্যই অহমের উদ্ভব। অহমকে ব্যক্তিত্বের কার্যনির্বাহী কর্ণধার বলা যেতে পারে। Id কে বাদ দিয়ে Ego এর কোন অস্তিত্ব নেই এবং Ego কখনো Id হতে স্বাধীন হতে পারে না।
গ. অধিসত্তা (Super Ego) : Super ego কে চিরাচরিত মূল্যবোধ এবং সামাজিক আদর্শের অভ্যন্তরীণ প্রতিভূ বলা হয়। পুরস্কার অথবা শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে বাবা-মা সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবোধ শিশুর উপর চাপিয়ে দেয়। এরূপ আদর্শ ও মূলবোধের আত্মস্থকরণের মাধ্যমে অধিসত্তার উদ্ভব হয়। অধিসত্তাকে ব্যক্তিত্বের নৈতিকতার ধারক ও বাহক বলা যেতে পারে। এর মুখ্য কাজ হচ্ছে ন্যায়অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় এবং সামাজিক আদর্শের ভিত্তিতে ব্যক্তিকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা। অধিসত্তা চায় নিজের মনের রঙে রাঙিয়ে ব্যক্তিত্বকে গড়ে তুলতে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, ফ্রয়েডের মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বে মানুষের সকল আচার আচরণ পারস্পরিক সম্পর্ক ও চিন্তাভাবনা, কামশক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এর তত্ত্বে মুখ্য কাজ হচ্ছে ন্যায়অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় এবং সামাজিক আদর্শের ভিত্তিতে ব্যক্তিকে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!