প্রাচীন রাঢ় জনপদের পরিচয় দাও।
অথবা, রাঢ় জনপদ উল্লেখ কর।
উত্তর ভূমিকা : প্রাচীন বাংলায় জনপদগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বলতে আমরা যে ভূখণ্ডকে বুঝি, প্রাচীন যুগে এসব অঞ্চলের কোনো বিশেষ নাম ছিল না। তখন ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও খণ্ডে বিভক্ত ছিল। এগুলোর মধ্যে রাঢ় ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ।
রাঢ় জনপদের নামকরণ : রাঢ় জনপদের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ‘আচারঙ্গ সূত্র’ নামক জৈন গ্রন্থে। সূক্ষ্মের সাথে সম্পর্কিত ভূভাগ ছিল রাঢ়, যা জৈন গ্রন্থে ‘লাঢ়’ বলেও উল্লিখিত হয়েছে। সূক্ষ্ম ছিল সম্ভবত রাঢ়েরই অংশ বিশেষ সম্ভবত দক্ষিণাংশ, যা পরবর্তীকালে ‘দক্ষিণ রাঢ়’ বলে অভিহিত হয়েছে। ‘দিপবংশ ও ‘মহাবংশ’ গ্রন্থে রাঢ় জনপদের উল্লেখ
পাওয়া যায়।
রাঢ় : বীরভূম, বর্ধমান ও ভাগীরথী নদীর পশ্চিমাঞ্চলই হলো রাঢ় জনপদ। সেখানকার রাঢ় উপজাতিদের নামানুসারে এ জনপদের নামকরণ করা হয় রাঢ় জনপদ। এ জনপদের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় জৈনপুথি আচারঙ্গ সূত্রে। জনপদের উত্তরতম সীমায় গঙ্গা ও ভাগীরথী, পূর্ব সীমায়ও নদী, মাঝের অংশটুকু রাঢ় জনপদ। রাঢ়ের দুই অংশ সূক্ষ্মভূমি ও বজ্রভূমি। অজয় নদ ছিল রাঢ়ের দুর্ভোগে মাঝের সীমারেখা। শ্রী ধারাচার্যের ‘ন্যায়কান্ডালি’ নামক গ্রন্থে দক্ষিণ রাঢ় দেশের উল্লেখ আছে। অজয় নদের উত্তর দিকে যে ভূভাগ তারই নাম উত্তর রাঢ়। উত্তর রাঢ়ের উত্তর সীমা ছিল রাজমহল পর্যন্ত বিস্তৃত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে রাঢ় ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। বর্তমানে ভারতের মেদেনীপুর জেলা রাঢ় জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।