প্রশ্নঃ বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির উপায় বর্ণনা কর ।

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির উপায় বর্ণনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : সরকারের বাজেটে নিয়মিত ব্যাপক ঘাটতি থাকা এবং ঐ ঘাটতি সরকারি ঋণের মাধ্যমে পূরণ করার প্রথা অর্থনীতির জন্য মোটেও শুভ নয় । বাংলাদেশের সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাপক সরকারি ঋণ গ্রহণ করার ফলে ঋণ সেবার পরিমাণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে । ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ২২ % ঋণ সেবাতে ব্যয় হয়েছে । অতঃপর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ২০০৯-১০ সালে রপ্তানি আয়ের ১০ % ঋণ সেবাখাতে ব্যয় হয়েছে । এহেন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সরকারি খাতে সঞ্চয় তথা রাজস্ব উদ্বৃত্ত বাড়িয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির অর্থায়ন করতে হবে ।

রাজস্ব বৃদ্ধির উপায় : নিয়ে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ উপায় বর্ণনা করা হলো :

১. প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধি : বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ কর পর্যাপ্ত পরিমাণে আদায় করা হচ্ছে না । এখানে মোট কর রাজস্বের প্রায় ২৭ % আদায় হয় প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে । কিন্তু ইন্দোনেশিয়া , মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে প্রত্যক্ষ কর থেকে মোট কর রাজস্বের যথাক্রমে প্রায় ৩৭ % এবং ৪৫ % আদায় করা হচ্ছে । অতএব প্রত্যক্ষ কর রাজস্ব বৃদ্ধির কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

২. আয়করের আওতা সম্প্রসারণ : প্রত্যক্ষ করের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আয়কর । কিন্তু বাংলাদেশে আয়করের আওতা অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ । আয়করের আওতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

৩. কর রাজস্ব বৃদ্ধি : সরকারের কর রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে । বাংলাদেশে কর রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যাপক অববংশ রয়েছে । কারণ বাংলাদেশে বর্তমানে কর / জিডিপি অনুপাত মাত্র ১৮.১ % , যদিও ভারত , ইন্দোনেশিয়া , মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে এ অনুপাত যথাক্রমে ২৬.২ % , ৩০.৭ % এবং ৩২.৮ % আছে ।

৪. মূল্য সংযোজন করের আওতা বৃদ্ধি : কর আহরণে মূল্য সংযোজন কর অত্যন্ত কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে । উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী এ কর সহজে ফাঁকি দিতে পারে না । তাই নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে এ কর পদ্ধতি চালু করার পর সম্প্রতি এ কর সরকারের রাজস্বের অন্যতম বৃহত্তম উৎনে পরিণত হয়েছে । অতএব আরো বেশি পণ্যকে এ করের আওতায় এনে কর রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব ।

৫. কর ফাঁকি রোধকরণ : বাংলাদেশে ব্যাপক হারে কর ফাঁকি দেয়া হয় । করের ভিত্তি গোপন করা , কর সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ ইত্যাদি কারণে কর ফাঁকি দেয়া সম্ভব হয় । অতএব কর ফাঁকি রোধকরণের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা সম্ভব ।

৬. কর প্রশাসনিক সংস্কার : কর প্রশাসনের দুর্বলতা বাংলাদেশে কর রাজস্বের স্বল্পতার অন্যতম প্রধান কারণ । প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার এবং কর্মকর্তাদের দুর্নীতি রোধকরণের মাধ্যমে কর রাজস্ব বৃদ্ধি করা যেতে পারে ।

৭. ভূমি উন্নয়ন কর : বাংলাদেশে ভূমি উন্নয়ন কর থেকে অতি সামান্য রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে । অথচ দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতিতে জমাজমির মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে । অতএব ভূমি উন্নয়ন করের কাঠামো সংস্কার করে এবং ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার সাথে করের সমন্বয় করে এ উৎস থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি করার অবকাশ আছে ।

৮. ডাক বিভাগ , টি এন্ড টি বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগে রাজস্ব বৃদ্ধি : ডাক বিভাগ , টি এন্ড টি বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগ থেকে সরকারের আয় বৃদ্ধির অবকাশ আছে । এগুলোতে উন্নতমানের সেবা প্রদান ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো সম্ভব ।

৯. রাষ্ট্রীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ বৃদ্ধি : রাষ্ট্রীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ প্রায়ই রুগ্ন অবস্থায় আছে । যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে এগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি করা সম্ভব । যদি তা সম্ভব না হয় তবে শীঘ্র রুগ্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা প্রয়োজন । বেসরকারিকরণের ফলে সরকার অন্তত ভর্তুকি প্রদান থেকে রেহাই পাবে ।

উপসংহার : বাংলাদেশে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির কতিপয় উপায় উপরে বর্ণনা করা হলো । সর্বোপরি সরকারের রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে দুর্নীতিমুক্ত সুব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন ।

[ad_2]