প্রথা বলতে কী বুঝ?
অথবা, প্ৰথা কী?
অথবা, প্রথার সংজ্ঞা দাও।
অথবা, প্ৰথা কাকে বলে?
উত্তর৷৷ ভূমিকা : মানবসমাজে প্রাথমিক অবস্থায় সমাজব্যবস্থা মোটামুটি প্রথার ভিত্তিতে পরিচালিত হতো। তখন প্রায়ই সামাজিক বিধিব্যবস্থার রূপ গ্রহণ করতো এবং তা লংঘন করলে গোষ্ঠী দ্বারা শাস্তি হতো। মানবসমাজ সবসময় প্রথা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো।
প্রথা : প্রথা হলো মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত রীতি ও ব্যবহার বিধি। লোকাচার ও লোকরীতি মান্য করে চলা মানব সমাজে অভ্যাসগত ক্রিয়ায় রূপান্তরিত হয়, একেই বলে প্রথা। বস্তুতপক্ষে, সমাজ অনুমোদিত মান ও জীবনধারার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলতে প্রথা ব্যক্তিকে বাধ্য করে। ব্যক্তির আচরণের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রথাসমূহকে যথাযথভাবে পালন করা উচিত বলে বিবেচনা করা হয়। সুদূর অতীত থেকে এ ধারা চলে আসছে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে প্রথার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
অধ্যাপক ম্যাকাইভার ও পেজ এর মতে, “প্রথা হলো আচারণ বিধি বা জটিল রীতির সমষ্টি।”
অধ্যাপক অগবার্ন ও নিমকফ এর মতানুসারে, “সামাজিক অনুমোদন এবং ধারাবাহিকতার লেবেলযুক্ত সামাজিক কার্যকে প্রথা বলা হয়।”
কিংসলে ডেভিস বলেন, “প্রথা বলতে সেসব আচরণ বুঝায় যা বহু পুরুষ যাবৎ চলে আসছে এবং তা অনুসৃত হয় এজন্য যে তা অতীতে অনুসৃত হতো। এর তিনটি দিক আছে- ঐতিহ্য, স্বয়ংক্রিয়তা এবং জনগণের স্বীকৃতি।”
প্রথা সম্পর্কে ডেভিস আরো মত দিয়েছেন যে, “প্রথার নানান প্রকার আচরণের স্বীকৃতি হতে পারে। যথা : অর্থনৈতিক, পারিবারিক, ধর্মীয় এবং ভাষা সম্পৰ্কীয়।”
অধ্যাপক জিসবার্ট প্রথার তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। যথা :
ক. আচরণের ধারাবাহিকতা।
খ. সামাজিক প্রকৃতি ৷
গ. আদর্শগত মূল্যমান।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনজুড়ে প্রথাগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই সামাজিক প্রথাসমূহ সকলের নিজ্ঞান অনুমোদন লাভ করে। আর সাধারণত অবচেতন অবস্থাতেই মানুষ সামাজিক প্রথা মান্য করে চলে। এগুলো এমন গভীরভাবে সকলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে যে কোন
কিছু করা বা না করার ব্যাপারে এগুলোকে মানুষ মূল্যায়নের একমাত্র সঠিক মাপকাঠি হিসেবে ভুল করে বসে। অতএব বলা যায়, সুদূর অতীত থেকে এ ধারা চলে আসছে বলে প্রথার পিছনে সকলের নিজ্ঞান অনুমোদন সবসময় থাকে।