পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া কিরূপ ছিল?
অথবা, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের মূল কারণ ছিল পাকিস্তান কর্তৃক ভারত শাসিত কাশ্মির অধিকার ও পাকিস্তানভুক্ত করার চেষ্টা। তাছাড়া ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পরাজয়ও এক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের ঘটনা : কাশ্মিরি নেতা শেখ আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পাকিস্তান ভারতে অনুপ্রবেশের সুযোগ পায়। ভুট্টোর পরিকল্পনা মোতাবেক কাশ্মিরে সশস্ত্র গেরিলা অনুপ্রবেশ ঘটানো শুরু হয় ১৯৬৫ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে। ৯ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মির বিপ্লবী পরিষদ গঠন করে অনুপ্রবেশকারীরা পাকিস্তানি সৈন্যদের সহায়তায় ভারত নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড শুরু করে। ব্যাপক গুলি, অগ্নিসংযোগ কাজ চলতে থাকলে পাকিস্তানি প্রচারযন্ত্র একে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মিরি জনগণের বিদ্রোহ বলে প্রচার চালাতে থাকে। সমস্ত আগস্ট মাসব্যাপী পাকিস্তানি সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর আক্রমণ চালাতে থাকে। অবশেষে ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে আক্রমণ চালালে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের প্রথম থেকেই ভারতীয় বাহিনী প্রাধান্য রাখতে শুরু করে। ভারতীয় সৈন্যরা লাহোরে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তানিরা ছামর সেক্টরে বিজয়ী হলেও অন্যান্য জায়গায় ব্যাপকভাবে পরাজিত হতে থাকে। ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলোক্সেই কোসিগেনের মধ্যস্থতায় ভারত পাকিস্তানের মধ্যে তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে।
উপসংহার : ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, এ যুদ্ধ ছিল আইয়ুব খানের অদূরদর্শিতার ফল। পরবর্তীতে এ যুদ্ধ আইয়ুব খানের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।