অথবা, আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণে সাংখ্যদের যুক্তিগুলো লিখ।
অথবা, পুরুষের অস্তিত্ব প্রমাণে সাংখ্যদের যুক্তিগুলো কী কী?
উত্তরা৷ ভূমিকা :
সাংখ্য দর্শন ভারতীয় দর্শনের প্রাচীনতম চিন্তাধারার মধ্যে অন্যতম। এ দর্শনের প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি কপিল। প্রকৃতি এবং এর পরিণামসহ সমস্ত তত্ত্বকে সংখ্যা দ্বারা বিন্যাস করা হয় বলে একে সাংখ্য দর্শন বলে। দ্বৈতবাদী বস্তুস্বাতন্ত্র্যবাদী সাংখ্য দর্শন পুরুষ ও প্রকৃতি এ দুটি পরম সত্তাকে স্বীকার করে। পুরুষ হলো শাশ্বত চৈতন্যস্বরূপ, যা জাগতিক পরিবর্তন ও ক্রিয়ার সাক্ষী, কিন্তু নিজে অপরিণামী ও নিষ্ক্রিয়।
পুরুষ বা আত্মার অস্তিত্বের প্রমাণ : সাংখ্য দর্শনে আত্মাকে পুরুষ বলা হয়। পুরুষ হলো শাশ্বত চৈতন্যস্বরূপ, যা জাগতিক পরিবর্তন ও ক্রিয়ার সাক্ষী, কিন্তু নিজে অপরিণামী ও নিষ্ক্রিয়। সাংখ্য দার্শনিকগণ পুরুষ বা
আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য নিম্নোক্ত যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছেন :
প্রথমত, সাংখ্য দার্শনিকদের মতে, ঘট, পট, চেয়ার, টেবিল প্রভৃতি সংঘাত, অর্থাৎ সাবয়ব জড়দ্রব্য অপরের প্রয়োজন সাধন করে থাকে। এরা যার প্রয়োজন সাধন করে তা জড় দ্রব্য হতে পারে না। যেহেতু প্রত্যেক জড়দ্রব্য অপরের প্রয়োজন সাধন করে। সুতরাং এমন কোন চেতন সত্তা আছে যার প্রয়োজন জড়দ্রব্যগুলো মিটিয়ে থাকে। সাংখ্য মতে, এ চেতন সত্তাই পুরুষ বা আত্মা ।
দ্বিতীয়ত, সাংখ্য দার্শনিকদের মতে, মন, বুদ্ধি প্রভৃতি যাবতীয় জড়দ্রব্য অচেতন। তাই তারা নিজেদের নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যেমন- একটি মোটরগাড়ি নিজে নিজে চলতে পারে না। তাকে চালানোর জন্য একজন চালক প্রয়োজন পড়ে। তেমনি যাবতীয় জড়বস্তুকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোন চেতন নিয়ন্ত্রক প্রয়োজন, সেই চেতন বা নিয়ন্ত্রক হলো পুরুষ বা আত্মা।
তৃতীয়ত, জগতের প্রত্যেক দ্রব্যই সুখাত্মক, দুঃখাত্মক ও বিষাদাত্মক। কিন্তু সুখ, দুঃখ ও বিষাদ অনুভূতির বস্তু। কোন জড় বা অচেতন দ্রব্য সুখ, দুঃখ ও বিষাদকে অনুভব করতে পারে না। সুতরাং সুখ, দুঃখ ও বিষাদকে ভোগ করার জন্য চেতন সত্তার অস্তিত্ব অনিবার্যভাবেই স্বীকার করতে হয়। এ চেতন সত্তাই হলো পুরুষ ।
চতুর্থত, সাংখ্য দার্শনিকদের মতে, দৃশ্য এবং দ্রষ্টা যে ভিন্ন এ কথা স্বীকার করতেই হবে। আর দৃশ্য থাকলে দৃশ্যের দ্রষ্টার অস্তিত্বও স্বীকার করতে হবে। জগৎ দৃশ্যমান। সুতরাং এ জগতের দ্রষ্টারূপী সচেতন ও ত্রিগুণাতীত নিত্য সত্তার অস্তিত্বও স্বীকার করতেই হবে। সে সত্তাই হলো পুরুষ বা আত্মা। সাংখ্য দার্শনিকগণ এভাবেই পুরুষের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, জগৎ সৃষ্টির উপাদান-কারণ হিসেবে সাংখ্য দার্শনিকগণ যে মতবাদ ব্যক্ত করেছেন তা ভারতীয় দর্শনে স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং জগৎ সৃষ্টির জন্য পুরুষ ও প্রকৃতির মিলন বলে যে বক্তব্য প্রদান করেছে তার গুরুত্বকেও অস্বীকার করা যায় না। কাজেই পুরুষ বা আত্মার স্বরূপ সম্পর্কে সাংখ্য দার্শনিকগণ যে যুক্তিতর্কের অবতারণা করেছেন তা ভারতীয় দর্শনে বিশেষ একস্থান দখল করে আছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af/
admin

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!