
ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠনের পটভূমি আলোচনা কর। এ দলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি কী ছিল?
admin
- 0
অথবা, কোন পটভূমিতে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (NAP) গঠিত হয়েছিল? এ পার্টির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমসমূহ কী ছিল? আলোচনা কর ।
উত্তর৷ ভূমিকা : দীর্ঘ দুইশ বছর ধরে ব্রিটিশ শাসনের কবল থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বহু আন্দোলন, রক্তপাত ও ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে অবশেষে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম লীগ রাজনৈতিক সংগঠনের উপর ভর করে বিশ্বের মানচিত্রে নবগঠিত রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভাব ঘটে পাকিস্তানের। যে প্লাটফরমের উপর পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল তার কিছুদিন যেতে না যেতে জনগণ এর উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে এবং বিকল্প চিন্তাধারার কথা ভাবতে থাকে। এমনকি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ মিলে আলাদা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়, যা প্রথমে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয়। এরপর মওলানা ভাসানীর সাথে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতবিরোধ দেখা দিলে ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (NAP) গঠিত হয়।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠনের পটভূমি : পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ভেঙে ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি’ সংক্ষেপে ‘ন্যাপ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ও পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে মওলানা ভাসানীর মতবিরোধ দেখা দেয়। ১৯৫৭ সালের ৭ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশনে তা প্রকাশ্য বিদ্রোহের রূপ নেয়। সোহরাওয়ার্দী তখন ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বা পাশ্চাত্যঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতির কট্টর সমর্থক ছিলেন। অন্যদিকে, মওলানা ভাসানী ও তার অনুসারীরা জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি এবং পূর্ব বাংলার জন্য পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেন। ইতঃপূর্বে ১৯৫৩ সালে পূর্ব বাংলার কিছুসংখ্যক কমিউনিস্ট কর্মীর উদ্যোগে হাজী মোহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বে গণতন্ত্রী দল নামে একটি ‘সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ বিরোধী’ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। অপরদিকে, মিয়া ইফতেখার উদ্দিন, খান আব্দুল গফফার খান, জি.এম. সৈয়দ আব্দুল করিম খান প্রমুখ বামপন্থি নেতা পশ্চিম পাকিস্তানে ‘ন্যাশনাল পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। আওয়ামী লীগ হতে পদত্যাগের পর মওলানা ভাসানী ঢাকায় এক রাজনৈতিক সম্মেলন আহ্বান করেন এবং এতে গণতন্ত্রী দল ও ন্যাশনাল পার্টির প্রতিনিধিগণও যোগদান করেন। ঐ সম্মেলনে উক্ত দুটি দল ও মওলানা ভাসানীর সমর্থকগণ একত্রিত হয়ে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে একটি নতুন দল গঠন করেন, যা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (NAP) নামে পরিচিত। এ দলটি প্রতিষ্ঠালগ্নে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা, সামন্তবাদের বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের সকল ভাষাভিত্তিক জাতীয় গোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে এর মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করে।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি : নিচে পর্যায়ক্রমে ন্যাপ (ভাসানী) ও ন্যাপ (মোজাফফর) পার্টির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচিসমূহ উল্লেখ করা হলো :
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি : ১৯৭২ সালে এ দলের ঘোষণাপত্রে প্রকাশিত কর্মসূচির মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। যথা :
১. প্রাপ্তবয়স্কদের (১৮ বছর) সর্বজনীন ভোটাধিকার ও শ্রেণিসমূহের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অপসারণের ব্যবস্
থা থাকবে। ২১ বছর বয়স্ক প্রতিটি নাগরিকের প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার অধিকার থাকবে।
২. ‘কৃষকের হাতে জমি’ এ নীতির ভিত্তিতে ভূমিব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধন করতে হবে। জমির সর্বোচ্চ সীমা হবে মাথাপিছু ৫ বিঘা বা পরিবার প্রতি ৫০ বিঘা। বিনা খেসারতে জোতদারি প্রথা উচ্ছেদ ও বিনামূল্যে ভূমিহীন চাষিদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বণ্টন করতে হবে। খাজনা প্রথার সম্পূর্ণ বিলোপসাধন করে উৎপাদনের উপর ক্রমবর্ধিত হারে কৃষি আয়কর ধার্য করতে হবে।
৩. সকল বিদেশি মূলধন বিনা ক্ষতিপূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত করতে হবে। সকল বৃহৎ শিল্প ও বৈদেশিক বাণিজ্য জাতীয়করণ করতে হবে। সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা মূল্যের ক্ষুদ্র শিল্প ব্যক্তিগত মালিকানায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে। শিল্প
ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় শ্রমিক ও কৃতকৌশলীদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে হবে।
৪. রাষ্ট্র সর্বস্তবের শিক্ষার ভার গ্রহণ করবে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা খরচে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। জনগণের ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের পূর্ণ সুযোগ থাকবে। শিক্ষাব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শ প্রদর্শিত হবে।
৫. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর নীতি ছিল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে দুনিয়ার সকল দেশের সাথে সহযোগিতার চেষ্টা করা এবং স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নীতি অনুসরণ করা। এ দল ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়াকে ‘সম্প্রসারণবাদী’ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। এটি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি বাতিল করার জোর দাবি জানায়। অপরপক্ষে, চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তুলতে আগ্রহ দেখায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মূল আওয়ামী লীগ থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী) এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) এর সৃষ্টি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও কিছু কিছু ক্ষত্রে মতাদর্শের সাদৃশ্যও রয়েছে। তবে ন্যাপ (ভাসানী) মূলত চীনপন্থি বাম রাজনৈতিক দল আর ন্যাপ (মোজাফফর)
বিশ্রপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত।