General Knowledge

নেতার কার্যাবলি আলোচনা কর।

অথবা, `নেতার কার্যাবলি কী কী?
উত্তর ভূমিকা :
নেতৃত্ব শব্দটির অর্থ ব্যাপক। Leadership শব্দটি এসেছে Lead থেকে, যার অর্থ পথ দেখানো (To guide), চালিত করা (To conduct), আদেশ করা (To direct) ইত্যাদি। যিনি নেতৃত্ব দেন তাকে বলা হয় নেতা (Leader)। যে কোন সংগঠনের নেতা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত লোকজনের সামগ্রিক দলটিকে অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করেন। নেতা সকলকে তার কাজ দ্বারা প্রভাবিত করেন তাই নেতৃত্বকে একটি কলা (Art) বলা যেতে পারে।
নেতার কার্যাবলি : নেতার ভূমিকা বা কাজ নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. সমন্বয় সাধন করা : যে কোন গোষ্ঠীর নেতাকে গোষ্ঠীর ক্রিয়াকলাপের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হয়। নেতাকে গোষ্ঠীর বিভিন্ন কার্যকলাপের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে হয়। গোষ্ঠীর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য যাতে বাস্তবে রূপায়িত হয়, তার দায়িত্ব নেতাকেই গ্রহণ করতে হয়। যেমন- সৈন্যাধ্যক্ষকে তার দৈনিক আদেশগুলো যাতে বাস্তবে রূপায়িত হয়, তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।
২. পরিকল্পনা রচনা করা : গোষ্ঠী বা দলের (Group) লক্ষ্য ও কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং তার বাস্তব রূপায়ণ এ দুইয়ের মধ্যবর্তী হলো পরিকল্পনা রচনা করার কাজ। নেতাকে অনেক সময় এ পরিকল্পনা রচনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।
৩. নীতিনির্ধারণ করা : নীতিনির্ধারণের মাধ্যমেই গোষ্ঠী তার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য লাভ করতে পারে। এ লক্ষ্য নির্ধারিত হতে পারে। কোন বাইরের কর্তৃপক্ষ, যেমন- সরকার এ লক্ষ্য স্থির করে দিতে পারেন। গোষ্ঠীর অধিকাংশ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্তের দ্বারা এ লক্ষ্য নির্ধারিত হতে পারে বা গোষ্ঠীর নেতা নিজেই এ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন, যখন তিনি মনে করেন যে, কোন বিশেষ কর্মপন্থা দলের লক্ষ্য সাধনের জন্য উপযোগী।
৪. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দেয়া : অনেক সময় নেতাকে বিশেষজ্ঞের কাজ করতে হয় এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যদের পরামর্শ দিতে হয়। তাই দলের অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় নেতাকে খুঁটিনাটি বিষয়ে অধিক জ্ঞান রাখতে হয়। বিশিষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার জন্য কোন ব্যক্তি অনেক সময় দলের নেতা নির্বাচিত হয়।
৫. প্রতিনিধিত্ব করা : দলের সব সদস্যদের পক্ষে দল বহির্ভূত অন্যান্য দলের (Group) সদস্যদের সাথে মুখোমুখী মিলিত হওয়া সম্ভব হয় না। সে কারণে নেতাকেই দল বহির্ভূত সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে প্রতিনিধির কাজ করতে হয়। যখন কোন দল অন্য কোথাও প্রতিনিধি প্রেরণ করেন তখন পদাধিকার বলে নেতাকেই প্রতিনিধিত্ব করতে হয়। নেতাই দলের পক্ষ থেকে চুক্তিবদ্ধ হন। Lewin তাই নেতাকে ‘গোষ্ঠীর রক্ষক’ (Gate keeper) হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
৬. অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করা : নেতার অন্যতম কাজ গোষ্ঠীর অভ্যন্তরস্থ সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করা। অন্যান্য সদস্যদের তুলনায় গোষ্ঠীর গঠনের খুঁটিনাটি বিষয়ে সবকিছু নেতাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এবং তার সে কাজ গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ সম্পর্কে প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে।
৭. পুরস্কার ও শাস্তি প্রদান : দলের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নেতা কোন কোন সদস্যদের তাদের প্রশংসনীয় কাজের জন্য পুরস্কৃত করতে পারেন এবং দলের নিয়মশৃঙ্খলার পরিপন্থি আচরণের জন্য তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন। কোন দলের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা দল থেকে কোন সদস্যকে বহিষ্কৃত করা এ ধরনের কাজ।
৮. সালিশি করা ও মধ্যস্থতা করা : দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কলহ দূরীকরণের উদ্দেশ্যে নেতা বিচারক ও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেন। নেতা দলকে দলীয় কোন্দল থেকে রক্ষা করেন। নেতা দলের অভ্যন্তরে ছোটখাট সমস্যা সালিশের মাধ্যমে সমাধান করে থাকেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, নেতার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন ও সুষ্ঠুভাবে কর্মকাণ্ড সম্পাদনের মধ্যেই নিহিত থাকে নেতৃত্বের ফলপ্রসূতা। সে দায়িত্ব পালনের মূল লক্ষ্য দলের লক্ষ্য অর্জন ও সদস্যদের সমর্থন লাভ। এজন্য নেতৃত্বের ফলপ্রসূতা দলীয় লক্ষ্য অর্জনের যে কোন সূচক এবং দলের সদস্যদের সন্তোষ অথবা সদস্যবৃন্দ কর্তৃক নেতার মূল্যায়ন দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!