নারী নির্যাতনে যৌতুক প্রথা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, নারী নির্যাতনে যৌতুকের চিত্র তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানব সমাজের সূচনালগ্ন থেকেই নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় পুরুষরা সদাতৎপর। পুরুষরা তাদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য নারীর উপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালায়। তেমনি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত কয়েকটি নির্যাতন প্রক্রিয়ার মধ্যে যৌতুক প্রথা অন্যতম। ধনী-গরিব, শিক্ষিত- অশিক্ষিত সকল ক্ষেত্রে নারী আজ যৌতুকের শিকার। নিম্নে নারীর উপর যৌতুক নির্যাতন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
যৌতুক প্রথা : যৌতুক হলো বিয়ের সময় কিংবা বিয়ের আগে পরে বর পক্ষ কন্যা পক্ষের কাছ থেকে যা চেয়ে বা অনেক সময় জোর করে নেয়। বর্তমান সময়ে যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিদিন দেখা যায় নারীরা যৌতুকের শিকার হচ্ছে। অনেক সময় যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় স্ত্রীর
উপর নেমে আসে স্বামী বা স্বামী পক্ষের অসহ্য নির্যাতন। এক্ষেত্রে অনেক নারীর সংসার পর্যন্ত ভেঙে যায়। বাংলাদেশ কাজী সমিতির মতে দেশে বছরে প্রায় দুই লক্ষ বিয়ে ভেঙে যায়। এর মধ্যে ১ লক্ষ বিয়ে ভাঙে যৌতুকের কারণে । যৌতুকের কারণে স্বামী বা স্বামীর পরিবার থেকে নারীর উপর যেসব অত্যাচার করা হয় সেসব অত্যাচারের কয়েকটি
সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে :
ক. স্ত্রীকে নির্যাতন করে হত্যা।
খ. টাকা আনতে ব্যর্থ হলে স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
গ. বিয়ের পরে কনের পিতার কাছ থেকে টাকা আনার জন্য মানসিক চাপ প্রয়োগ ।
ঘ. পুলিশ, মাস্তান কিংবা বন্ধু বান্ধব দিয়ে স্ত্রী ও তার পরিবারকে অহেতুক হয়রানি ও নির্যাতন করা।
মানবাধিকার সংগঠন দি ইনস্ট্রিটিউট অব ডেমোক্রেটিক রাইট্স এর তথ্য মতে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ ৬ বছরে যৌতুকের শিকার ১০৪৯ জন গৃহবধূ। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে ৬৮৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৮২ জ স্বামীর অত্যাচারে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। জরিপে দেখা যায় ১৯৯৭ সালে যৌতুকের শিকার ৯৮ জন নারী। ২০০৪ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ১৮৯ এ দাঁড়ায়, যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, উপরের আলোচনায় নারীর উপর যৌতুকের যে চিত্র পেশ করা হলো তা শুধু নারীর জন্য নয় বরং গোটা সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই সুশীল সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর উপর যৌতুকের প্রভাব দূর করতে হবে।