অথবা, তৃতীয় আর্যসত্যটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, দুঃখের নিবৃত্তি আছে বলতে গৌতম বুদ্ধ কী বুঝিয়েছেন?
অথবা, দুঃখের নিবৃত্তি বলতে বুদ্ধ কী বুঝেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : গৌতম বুদ্ধের (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দ- খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দ) বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সে মতবাদই ‘বৌদ্ধ দর্শন’ বা ‘বৌদ্ধধর্ম।’ রাজ পরিবারের জন্মগ্রহণ করলেও গৌতম বুদ্ধ বাল্যকাল হতেই চিন্তাশীল ও বৈরাগ্যভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি নিজের আত্মশক্তির উপর বিশ্বাস রেখে বৌদ্ধ গয়ায় বোধিবৃক্ষ তলে বহু বছর কঠোর তপস্যা করে জগতে দুঃখের রহস্য ও স্বরূপ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। এটাই গৌতমের বুদ্ধত্ব লাভ এবং এ দিন হতে বুদ্ধ (সম্যকজ্ঞানী ) নামে খ্যাত হন। জরা, ব্যাধি এবং মৃত্যুর দুঃখাবহ দৃশ্য দেখে তিনি উপলব্ধি করেন, এ জগৎ দুঃখে পরিপূর্ণ।
“দুঃখের নিবৃত্তি আছে”-উক্তিটির ব্যাখ্যা : কঠোর সাধনা ও গভীর চিন্তার ফলে বুদ্ধদেব যে চারটি সত্যের সন্ধান পেয়েছিলেন তাকে আর্যসত্য বলে। এ চারটি আর্যসত্য হলো: (১) দুঃখ আছে; (২) দুঃখের কারণ আছে; (৩)
দুঃখের নিবৃত্তি আছে এবং (৪) দুঃখ নিবৃত্তির মার্গ বা পথও আছে। নিচে প্রশ্নপত্রের আলোকে তৃতীয় আর্যসত্য অর্থাৎ “দুঃখের নিবৃত্তি আছে”-উক্তিটি ব্যাখ্যা করা হলো :
বুদ্ধদেব বলেছেন, দুঃখ যেহেতু শর্তাধীন, সেহেতু শর্ত বা কারণকে অপসারিত করতে পারলেই দুঃখের নিবৃত্তি সুনিশ্চিত। তাই তিনি বলেছেন, দুঃখের নিবৃত্তি আছে। এ দুঃখ নিবৃত্তির অবস্থাই হলো নির্বাণ। বৌদ্ধদেবের মতে, দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তির অবস্থাই হলো নির্বাণ। মানুষ সংযম সহকারে সত্যের অনুক্ষণ ধ্যান করে নিজের প্রচেষ্টায় ইহজীবনে এ অবস্থাকে লাভ করতে পারে। এটাই জীবন্মুক্তির অবস্থা। মুক্ত ব্যক্তিকে বৌদ্ধরা পূজনীয় ব্যক্তি নামে অভিহিত করেন। বুদ্ধদেব দুই প্রকার কর্মের কথা বলেছেন। যথা : সকাম কর্ম ও নিষ্কাম কর্ম। রাগ, দ্বেষ, মোহ
ও জাতকর্মই হলো সকাম কর্ম। মানুষের সকাম কর্মই তার মধ্যে বিষয়াসক্তি তথা বন্ধনের সৃষ্টি করে তার পুনর্জন্ম ঘটায়; কিন্তু নিষ্কাম কর্ম বিষয়ানুরাগ সৃষ্টি করে না। সুতরাং নিষ্কাম কর্মের ফলে পুনর্জন্মের কোন সম্ভাবনা থাকে না। উক্ত দু’রকম কর্মের সাথে বুদ্ধদেব দু’রকমের বীজ বপনের তুলনা করেছেন। তাঁর মতে, সকাম কর্ম হলো ফলদায়ী বীজ বপন, আর নিষ্কাম কর্ম হলো শুষ্ক ও বন্ধ্যা বীজ। বুদ্ধদেবের মতে, নির্বাণ লাভের পর মুক্ত ব্যক্তি সকল রকমের কর্ম ত্যাগ করে জগতের সর্ব বিষয়ে উদাসীন থাকেন না, বরঞ্চ দুঃখ- দুর্দশাগ্রস্ত জীবের উদ্ধারের জন্য নিষ্কাম ভাবে সকল রকমের কর্ম করেন। কাজেই বুদ্ধদেবের মতে, দুঃখের নিবৃত্তি আছে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় বৌদ্ধ দর্শনে চারটি আর্যসত্যের মধ্যে তৃতীয় আর্যসত্য হিসেবে “দুঃখের নিবৃত্তি আছে”-উক্তিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079