General Knowledge

দুঃখের কারণ আছে”-উক্তিটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, গৌতম বুদ্ধের মতে দুঃখের কারণ কী?
অথবা, দ্বিতীয় আর্যসত্যটি সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, দুঃখের কারণ আছে বলতে গৌতম বুদ্ধ কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
গৌতম বুদ্ধের (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দ- খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দ) বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সে মতবাদই ‘বৌদ্ধ দর্শন’ বা ‘বৌদ্ধধর্ম।’ রাজ পরিবারের জন্মগ্রহণ করলেও গৌতম বুদ্ধ বাল্যকাল হতেই চিন্তাশীল ও বৈরাগ্যভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি নিজের আত্মশক্তির উপর বিশ্বাস রেখে
বৌদ্ধ গয়ায় বোধিবৃক্ষ তলে বহু বছর কঠোর তপস্যা করে জগতে দুঃখের রহস্য ও স্বরূপ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। এটাই গৌতমের বুদ্ধত্ব লাভ এবং এ দিন হতে বুদ্ধ (সম্যকজ্ঞানী ) নামে খ্যাত হন। জরা, ব্যাধি এবং মৃত্যুর দুঃখাবহ দৃশ্য দেখে তিনি উপলব্ধি করেন, এ জগৎ দুঃখে পরিপূর্ণ।
দুঃখের কারণ আছে”-উক্তিটির ব্যাখ্যা : কঠোর সাধনা ও গভীর চিন্তার ফলে বুদ্ধদেব যে চারটি সত্যের সন্ধান পেয়েছিলেন তাকে আর্যসত্য বলে। এ চারটি আর্যসত্য হলো : (১) দুঃখ আছে; (২) দুঃখের কারণ আছে; (৩) দুঃখের নিবৃত্তি আছে এবং (৪) দুঃখ নিবৃত্তির মার্গ বা পথও আছে। নিচে প্রশ্নপত্রের আলোকে দ্বিতীয় আর্যসত্য অর্থাৎ “দুঃখের
কারণ আছে”- উক্তিটি ব্যাখ্যা করা হলো :
বুদ্ধের মতে জগতের প্রত্যেকটি জিনিস কার্য-কারণ শৃঙ্খলে আবদ্ধ। কোন বস্তুই নিজ থেকে উৎপন্ন হয় না-একটি ঘটনা অন্য একটি ঘটনা থেকে উৎপত্তি। সবকিছুর উৎপত্তি হয় ঘটনা থেকে। বৌদ্ধ দর্শনের এ তত্ত্বকে ‘প্রতীত্য-সমুৎপাদ’ বলে। প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি অনুসারে বুদ্ধদেব দুঃখেরও কারণ আছে বলে উল্লেখ করেন। এ কারণ দ্বাদশ নিদান বা
ভবচক্রের মাধ্যমে বুদ্ধদেব ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেমন- (১) দুঃখের কারণ জরামরণ; (২) জরামরণের কারণ জাতি বা জন্ম; (৩) জাতি বা জন্মের কারণ ভব; (৪) ভব-এর কারণ উপাদান; (৫) উপাদানের কারণ তৃষ্ণা; (৬) তৃষ্ণার কারণ বেদনা; (৭) বেদনার কারণ স্পর্শ; (৮) স্পর্শের কারণ ষড়ায়তন; (৯) ষড়ায়তনের কারণ নামরূপ; (১০) নামরূপের কারণ বিজ্ঞান; (১১) বিজ্ঞানের কারণ. সংস্কার এবং (১২) সংস্কারের কারণ অবিদ্যা। এ অবিদ্যা হলো চারটি আর্যসত্য সম্পর্কে। অজ্ঞতা-জগত ও জীবন সম্পর্কে অজ্ঞতা। সুতরাং অজ্ঞতা বা অবিদ্যাকে দুঃখের মূল কারণ বলা যেতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় বৌদ্ধ দর্শনে চারটি আর্যসত্যের মধ্যে দ্বিতীয় আর্যসত্য হিসেবে “দুঃখের কারণ আছে”- উক্তিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!