তত্ত্বের সাথে অনুকল্পের সম্পর্ক কী?

তত্ত্বের সাথে অনুকল্পের সম্পর্ক কী?
অথবা, তত্ত্বের সাথে অনুকল্পের কী সম্পর্ক? ব্যাখ্যা কর।

অথবা, তত্ত্বের সাথে অনুকল্পের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তা তোমার নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই একজন বিজ্ঞানী বাস্তব ও নিরপেক্ষ জ্ঞান তথা সত্যানুসন্ধানে ব্যাপৃত হন। আর ঘটনা হলো গবেষণার প্রথম উপজীব্য বিষয়। গবেষক সব ঘটনা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালান না। তিনি যেসব ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন সেগুলোর উন্মেষ ও ফলশ্রুতি মানব স্বার্থের ইতিবাচক বা নেতিবাচক দিককে প্রভাবিত করতে চায়। এসব ঘটনা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেই তিনি সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এ কাজটি তাঁকে করতে হয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেই । আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যেহেতু সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক কর্মপ্রক্রিয়া সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই এর কিছু মৌলিক উপাদান রয়েছে । এ রকম দু’টি মৌলিক উপাদান হলো অনুকল্প বা অনুমিত সিদ্ধান্ত ও তত্ত্ব (Theory)।
তত্ত্বের সাথে অনুমিত সিদ্ধান্তের সম্পর্ক : তত্ত্ব ও অনুকল্পের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তত্ত্বের সাথে অনুকল্পের সম্পর্ক বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
তত্ত্বের বিভিন্ন বিষয় বা তথ্যাবলিকে যুক্তিপূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা যেতে পারে । তত্ত্বে বর্ণিত সম্পর্কের বাইরেও নতুন কোনো সম্বন্ধে ধারণা করা যেতে পারে বা তত্ত্বনির্ভর নতুন সম্পর্ক সম্বন্ধে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেতে পারে । এরূপ সিদ্ধান্ত কতকখানি সঠিক তা প্রমাণসাপেক্ষ। তত্ত্ব হতে অবরোহমূলক সিদ্ধান্তকে
যখন একটি গবেষণার উপযোগী করে নিরূপণ বা গঠন করা হয়, তখন তা অনুমান হিসেবে গণ্য হয় । এর সঠিকতা গবেষণার মাধ্যমে যাচাই করা হয় এবং সঠিক মাণিত হলে পরবর্তীতে আবার নতুন তত্ত্বের আওতাভুক্ত হয় । বস্তুত, তত্ত্ব ও অনুমানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।


অনুমিত সিদ্ধান্ত মূলত এক ধরনের সম্পর্ক নির্দেশক উক্তি এবং প্রস্তাবনাও বটে, যা তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত আবার প্রত্যক্ষ পরীক্ষণের মাধ্যমে সমর্থিত হলে তত্ত্ব বা তত্ত্বের অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়। বস্তুনিষ্ঠ গবেষণায় ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান এবং গবেষণাকে নির্দেশনা দানের জন্য অনুমিত সিদ্ধান্ত গঠন করা হয় । অনুমিত সিদ্ধান্ত
একটি সাময়িক সিদ্ধান্ত বিশেষ, যা গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরিবর্তিত, গৃহীত বা বাতিল হতে পারে।

যে কোনো মূল্যবান তত্ত্বেরই বৈশিষ্ট্য হলো যে, এ তত্ত্ব হতে নতুন অনুমিত সিদ্ধান্ত গঠনের সুযোগ থাকে। এ অনুমিত সিদ্ধান্ত পরবর্তী পর্যায়ে সঠিক বা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয় এবং ভবিষ্যতে মূল তত্ত্বের নতুন পরীক্ষা-
সুযোগ করে।

অনুমিত সিদ্ধান্ত কোন না কোনো তত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে হয়। অনুমিত সিদ্ধান্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপরে ভিত্তি করে সামাজিক তত্ত্ব গ্রহণ বা বর্জন এবং নতুন তত্ত্ব গঠনের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিকাশ সম্ভব । অনুমিত সিদ্ধান্ত তত্ত্বের বিমূর্ততাকে বাস্তব তথ্যের সাহায্যে পরীক্ষা করতে সাহায্য করে।

তত্ত্ব ঘটনাবলির সামঞ্জস্য বিধানে ও তার অর্থ নির্ণয়ে সাহায্য করে। ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশ দান করতে পারে। কোনো বিষয়ের তথ্যসংগ্রহ করে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য সুসংঘবদ্ধ করা হলে তা তত্ত্বে পরিণত হয় । তত্ত্ব কোনো পরিকল্পনা বা ভাবনা নয়, বরং এটি তথ্য নির্ভর ।


অনুকল্প গবেষণা ও তত্ত্বের মধ্যে একটি প্রয়োজনীয় যোগসূত্র। অনুমান আমাদের সাধারণ জ্ঞানের অনুকূলে হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এটি সঠিক বা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হতে পারে। অনুমান সবসময় বাস্তবসম্মত পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা যাচাই করা হয়। উত্তর যাহোক, অনুকল্প একই প্রশ্ন যার উত্তর পাওয়া সম্ভব বলে আশা করা হয় । কার্যকরী অনুমান গঠন কষ্টসাধ্য হলেও গবেষণাকার্যকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুমান গঠন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ।


উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তত্ত্ব এবং অনুকল্পের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় । অনুকল্প
গবেষককে গবেষণা কাজের সর্বক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা দানে সাহায্য করে এবং কোনো বিষয় গ্রহণীয় বা বর্জনীয় তা
সুস্পষ্ট করে দেয় । অন্যদিকে, তত্ত্ব সঠিক অনুমিত সিদ্ধান্ত গঠনে ভূমিকা রাখে এবং নতুন কোনো জ্ঞান অন্বেষণ বা সমস্যা
সমাধানের উপায় খুঁজতে পথ নির্দেশ করে।