অথবা, জৈন দার্শনিকরা জ্ঞানের কয়টি উৎসের কথা বলেছেন এবং সেগুলো কী কী?
অথবা, কী কী উপায়ে জ্ঞান হয় বলে জৈনরা মনে করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
জৈন দর্শনানুসারে, পদার্থের যথাযথ ধারণাই জ্ঞান। অর্থাৎ যে জিনিস বাস্তবে যেরূপ তাকে সে জিনিস বলে জানাকেই জ্ঞান বলা হয়। সন্দেহপূর্ণ ধারণাকে যথার্থ জ্ঞান বলা যায় না। যথার্থ জ্ঞান মানুষের উদ্দেশ্য সাধনে সাহায্য করে । জৈন মতে, জ্ঞাত বস্তুর সাথে জ্ঞাতার যখন সঠিক পরিচয় ঘটে তখন জ্ঞানের উৎপত্তি হয় ।
জ্ঞানের উৎস : জৈন দার্শনিকরা জ্ঞানের উৎস হিসেবে তিনটি বিষয়ের কথা স্বীকার করেছেন। এ তিনটি বিষয় হলো- প্রত্যক্ষ, অনুমান এবং শব্দ।
১. প্রত্যক্ষ : জৈন দার্শনিকদের মতে, জ্ঞান এবং জ্ঞানের বস্তু এক নয়। জ্ঞানের বস্তু জ্ঞান বা জ্ঞাতার উপর নির্ভরশীল নয়। প্রত্যক্ষভাবে জ্ঞান জ্ঞানের বস্তুকে প্রকাশ করে মাত্র। সূর্য যেমন নিজেকে এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্য বস্তুকে প্রকাশ করে, তেমনি জ্ঞানও নিজেকে এবং অন্য বস্তুকে প্রকাশ করে। জ্ঞান অন্য বস্তুকে প্রকাশ করে বা আমাদের জ্ঞান হয় তখনই যখন জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় বস্তুর মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হয়। এ দুইয়ের মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে যথার্থ জ্ঞান সম্ভব নয়। জৈন মতে, জ্ঞানের বস্তুর স্বতন্ত্র সত্তা আছে। আর এ স্বতন্ত্র সত্তার জ্ঞানের জন্য দরকার জ্ঞাতার সাথে তার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ।
২. অনুমান : জৈন মতে, যথার্থ অর্থে অনুমান পূর্বে অর্জিত জ্ঞাননির্ভর। পূর্বে আমরা যে জ্ঞান বা ধারণা লাভ করি তার ভিত্তিতেই প্রয়োজনবোধে নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য আমরা অনুমানের আশ্রয় নেই। কাজেই পূর্বে যে জ্ঞান আমরা অর্জন করেছি তা যদি যথার্থ হয় তাহলে সে জ্ঞানের ভিত্তিতে যে অনুমান করা হবে তার জ্ঞানও যথার্থ হতে বাধ্য।
৩. শব্দ : শব্দ বা আপ্ত বাক্য বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির বচন মাত্র। শব্দ হতে আমরা যথার্থ জ্ঞান পেতে পারি বলে জৈনরা মনে করেন। দীর্ঘদিনের সৎ জীবনযাপন, সৎচিন্তা ও সৎকর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ মহত্ত্ব অর্জন করে। এরূপ মহৎ ও সজ্জন ব্যক্তির মুখনিঃসৃত বাণীকে শব্দ বলা হয় বা আপ্ত বাক্য বলা হয়। আর সজ্জন ব্যক্তি যখন কাউকে কিছু বলেন তখন তা হয় তার দীর্ঘদিনের অনুশীলনের ফল । কাজেই সজ্জন ব্যক্তির মুখনিঃসৃত বাণী হতে যে জ্ঞান হয় তা যথার্থ জ্ঞান বলে জৈনরা মনে করেন।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জৈনদের মতে, জ্ঞান বা চৈতন্য হলো আত্মার স্বাভাবিক ও অবিচ্ছেদ্য গুণ বা ধর্ম। তারা জ্ঞান বলতে বুঝিয়েছেন মূলত প্রত্যক্ষভাবে অর্জিত জ্ঞানকে। প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ এ
তিনটি জ্ঞানার্জনের উপায়ই শেষ বিচারে প্রত্যক্ষ জ্ঞান। যদিও জ্ঞানের উৎস সম্পর্কিত জৈনদের এ মতবাদ নানা দিক থেকে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে তথাপি তাদের এ মতবাদের দার্শনিক তাৎপর্য অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%9c%e0%a7%88%e0%a6%a8/
admin

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!