অথবা, জৈন দর্শনকে বহুত্ববাদী দর্শন বলা হয় কেন?
অথবা, জৈন ধর্মের বহু ঈশ্বরবাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : দর্শনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, জৈন দর্শন একটি প্রাচীন দর্শন। জৈন দর্শনের আবির্ভাব হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগে। চব্বিশজন তীর্থঙ্কর জৈন ধর্মের প্রচারক। মহাবীরকে জৈন ধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। জৈন দার্শনিকগণ নিরীশ্বরবাদী ও বস্তুবাদী। তারা দর্শনের যেসব সমস্যাবলি নিয়ে আলোচনা করেছন তার মধ্যে বহুত্ববাদ অন্যতম।
জৈন বহুত্ববাদ : জৈন দার্শনিকগণ এক ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। তাদের মতে, এক ঈশ্বরের সত্তা প্রত্যক্ষ, অনুমান বা যথার্থ শব্দ প্রভৃতির দ্বারা। প্রমাণ করা যায় না। জগৎকে ব্যাখ্যা করার জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব কল্পনা করার কোন প্রয়োজন নেই । জীবের কর্ম হতে যে অন্ধ অদৃষ্ট শক্তির সৃষ্টি হয়, সেই শক্তিই পুদগলের সাহায্যে জগৎ সৃষ্টি করেছে।
জৈনমতে, জগৎ সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ হল অদৃষ্ট শক্তি এবং উপাদান কারণ হলো পুদগল। অর্থাৎ জৈনগণ জগৎ সৃষ্টির পিছনে এক ঈশ্বরের বদলে অনেক কারণের কথা বলেন।
সিদ্ধপুরুষ : জগৎ স্রষ্টা হিসেবে ঈশ্বরের সত্তা অস্বীকার করে জৈনগণ একাধিক মুক্ত ও স্বাধীন সিদ্ধপুরুষের ধ্যান ওপূজার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। তাদের মতে, এ সিদ্ধ পুরুষগণই হচ্ছে ঈশ্বরতুল্য। নির্দেশ ও অনুপ্রেরণার জন্য সিদ্ধপুরুষের পূজা করার প্রয়োজন জৈনরা স্বীকার করেছেন।
মুক্তিলাভ : জৈনগণ বিশ্বাস করেন যে, জীবের ব্যক্তিগত মুক্তি কারো হাতে নয়। তার মুক্তি অন্য কেউ এনে দিতে পারে না। প্রত্যেক জীবকে তার নিজের চেষ্টায় মুক্তিলাভ করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে মুক্ত ও সিদ্ধপুরুষেরা দুর্গম পথে আলোকবর্তিকার কাজ করেন।
মুক্ত পুরুষের পূজা : জৈনরা মনে করেন, মুক্ত ও সিদ্ধপুরুষদের উদ্দেশ্যে পূজা নিবেদনের দ্বারা মুক্তিকামী ব্যক্তি আত্মোন্নতি লাভ করতে পারেন। মুক্ত পুরুষগণ সাধারণ লোক হতে শ্রেষ্ঠ। তারা জীবনে মহৎ কর্মের দ্বারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। কাজেই শ্রেষ্ঠ পুরুষদের আদর্শ সামনে রেখে সাধারণ লোক নিজেও শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব : জৈন দার্শনিকগণ মানুষকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। তাদের মতে, জগতের সকল বস্তু ও ধারণার মধ্যে মানুষ বা মানুষের ধারণাই সর্বশ্রেষ্ঠ। মানুষের মধ্যেই ঐশ্বরিক গুণাবলি বিদ্যমান। মানুষ তার জ্ঞানকে মুক্তপুরুষদের অনুসরণীয় পথে পরিচালিত করে এসব গুণাবলির অধিকারী হয়। এভাবে ঈশ্বরের একক সত্তাকে অস্বীকার করে জৈনরা সিদ্ধপুরুষদের বা মুক্তপুরুষের ধারণা দ্বারা এবং মানুষকে ঐশ্বরিক গুণের অধিকারী হিসেবে বর্ণনা করে বহুত্ববাদের প্রতিষ্ঠা করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জৈনরা এক ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে তাদের বহুত্ববাদী দর্শন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করার কারণে তাদের মতবাদের বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা উপস্থাপিত হলেও তাদের মতবাদের দার্শনিক গুরুত্ব একেবারে কম নয়। কারণ তারা তাদের মতের সমর্থনে যেসব যুক্তি উপস্থাপন
করেছেন সেগুলোর অধিকাংশই অকাট্য হিসেবে প্রমাণিত।

ডিগ্রী অনার্স মাস্টার্স পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে পেতে Whatsapp এ ম্যাসেজ করুন। Whatsapp 01979786079