General Knowledge

জৈন দর্শন নাস্তিক্যবাদী দর্শন’- সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, জৈনদের নাস্তিক্যবাদের পরিচয় দাও।
অথবা, জৈন দার্শনিকরা যে নাস্তিক সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
জৈন দর্শন অতি প্রাচীন দর্শন। জৈনধর্ম ও দর্শনের প্রধান গ্রন্থগুলোতে যেসব উপদেশ ও বাণী আছে সেসব মহাবীরের অবদান। তাই মহাবীরকে জৈনধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলে সবাই মনে করে। জৈন দার্শনিকগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাদের ধর্ম সম্পর্কিত আলোচনায় আমরা ঈশ্বর সম্পর্কিত আলোচনা পাই ।
জৈন নাস্তিক্যবাদ : যে মতবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না সে মতবাদকে নাস্তিক্যবাদ বলা হয়। জৈন দর্শন ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস করে না। আর যেহেতু জৈনরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না তাই তাদের মতবাদকে নাস্তিক্যবাদ বলা হয়। ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে জৈনরা কতকগুলো যুক্তি দিয়েছেন। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. ঈশ্বরের অনুমান প্রমাণিত নয় : জৈনগণ মনে করেন, ঈশ্বরের সত্তা প্রত্যক্ষ বা অনুমান কোনকিছুর দ্বারাই প্রমাণিত নয়। তাই জগৎকে ব্যাখ্যা করার জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব কল্পনা করার কোন প্রয়োজন নেই। জীবের কর্ম হতে যে অন্ধ অদৃষ্ট শক্তির সৃষ্টি হয়, সে শক্তিই পুদগলের সাহায্যে জগৎ সৃষ্টি করেছে।
২. ঈশ্বর জগতের কারণ নয় : কার্যকারণের সার্বিক নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক কার্য কোন না কোন একটা কারণে সৃষ্ট হয় এবং সৃষ্টির পূর্বে এর কোন অস্তিত্ব থাকে না। কিন্তু জগৎ কোন নির্দিষ্টকালে সৃষ্ট নয়। এটা অনাদিকাল থেকেই চলে আসছে। সুতরাং জগতের কারণরূপী ঈশ্বরের ধারণা মানুষের কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।
৩. ঈশ্বর স্রষ্টা নয় : কার্যকারণ বিধি পরিবর্তন স্বীকার করে। এ বিধি অনুসারে, কারণের পরিবর্তন ছাড়া কার্য সৃষ্টি হয় না। আবার পরিবর্তনেরও কারণ আছে। সুতরাং ঈশ্বর যদি সবকিছুর স্রষ্টা হয় তাহলে ঈশ্বরেরও পরিবর্তন আছে এবং তারও কারণ আছে। জৈনরা বলেন, এভাবে কারণের কারণ খুঁজতে গেলে অনবস্থা দোষ ঘটে। কাজেই স্রষ্টারূপী ঈশ্বরের
ধারণা যথার্থ নয়।
৪. ঈশ্বর পূর্ণ নয় : জৈনরা মনে করেন যা পূর্ণ তার কোন অভাব থাকতে পারে না । ঈশ্বরের অস্তিত্ব মেনে নিলে স্রষ্টারূপী ঈশ্বর কেন জগৎ সৃষ্টি করলেন সে প্রশ্ন উঠে। ঈশ্বর খেয়ালবশত বা দয়াবশত জগৎ সৃষ্টি করেন নি। তিনি নিশ্চয়ই তার কোন অপূর্ণতা মোচনের জন্য জগৎ সৃষ্টি করেছেন। আর অপূর্ণতার ধারণা ঈশ্বরের ধারণার পরিপন্থি। তাই ঈশ্বরের
অস্তিত্ব নেই।
৫. ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নয় : জৈনগণ বলেন, ঈশ্বরের উপর যেসব গুণ আরোপ করা হয়, সেগুলোকে প্রমাণ করা যায় না। যেমন- ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান বলা হয়। যদি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হয়, তবে জগতের সব বস্তুই তিনি নির্মাণ করতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। কাজেই ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রশ্ন আসে না।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জৈনরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে কতিপয় যুক্তি প্রদান করে তাদের নাস্তিক্যবাদী মনোভাবের পরিচয় দেন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করায় তাদের মতবাদ প্রশ্নের মুখোমুখি হলেও তাদের যুক্তির ধরন তাদের মতবাদকে এক গৌরবোজ্জ্বল অবস্থানে নিয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!